কুয়েতে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার মানবপাচারে অভিযুক্ত বাংলাদেশি এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে নির্দোষ বলে সাফাই গেয়েছিলেন কুয়েতের বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এস.এম. আবুল কালাম। চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে দেয়া এক চিঠিতে তিনি এই এমপির বিষয়ে অনেকটা ইতিবাচক অবস্থান নেন। ওই চিঠির স্মারক নম্বর কুয়েত/প্রশাসন / বিবিধ-১/২০২০।
সংসদ সদস্য কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েত সরকারের তদন্তে যেখানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে, সেখানে তার পক্ষে সাফাই গেয়ে বিতর্কিত হয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সম্প্রতি এমপি পাপুলের পক্ষে সাফাই গেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দিয়েছেন তিনি, তার লেখা চিঠি এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমের হাতে। রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে পাপুলের বিরুদ্ধে প্রকাশিত খবরগুলোকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
তদন্তে বের হয়ে আসছে একের পর এক তথ্য। অর্থ পাচার, ঘুষ কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সংসদ সদস্য কাজী পাপুলের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নেয়া কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীদের নাম বের হয়ে আসছে দেশটির তদন্তে। শুধু মানবপাচার নয়, গ্রেফতারকৃত পাপুলের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগের তদন্ত করছে এখন কুয়েতের গোয়েন্দা সংস্থা।
উল্টো চিত্র বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। গ্রেফতারের ১৬ দিন পরও কোন তথ্য নেই, দাবি রাষ্ট্রদূতের। অথচ তার পাঠানো চিঠিতে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যে। এর মধ্যে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, দায়িত্বে না থাকলেও তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করবে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো।
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তাছাড়া সরকার আমাদের কিছু জানাচ্ছে না। কর্মচারী জড়িত এই সেই, এগুলো মুখরোচক কথা, বাতাসের কথা। কিসের তদন্ত হবে? বাতাসের কথা থেকে কোন তদন্ত হয়? চিঠির বিষয়ে অবগত নন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তের আওতায় আনা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বোধহয় চিঠি দিয়েছিলেন, এটা হয়তো ব্যক্তি চিঠি, আমি জানি না। অবশ্যই বড় অ্যাকশন হবে। আমরা ইতিমধ্যে নতুন রাষ্ট্রদূত ওখানে কে যাবেন সেটা নির্ধারণ করেছি। বর্তমান বাদ হলেও যদি দেখা যায় যে, এগুলোর সাথে সম্পৃক্ততা আছে, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, তাহলে তারা এটা দেখবে। কুয়েতের গণমাধ্যমের সর্বশেষ খবরে বলা হচ্ছে, পাপুলের কাছ থেকে ২৮ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে দেশটির পুলিশ আরও দুই ব্যক্তিকে খুঁজছে।
প্রতিমন্ত্রীকে দেয়া রাষ্ট্রদূতের এমন চিঠির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চিঠি একজন অপরাধীর পক্ষে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ঢাকাকে ভুল বোঝানো ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মানবপাচার ও অর্থপাচারের অপরাধে কুয়েত সরকার গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে কয়েকদিন হলো। রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে প্রতিদিন দেশটির গণমাধ্যমে খবর আসছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত।
শুধু তাই নয়, গ্রেপ্তারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢাকাকে কিছুই জানাতে পারেনি তিনি। এছাড়া কুয়েতে বাংলাদেশি দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত আছে বলেও দেশটির গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এমন সংবাদ যখন কুয়েতি গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে তখন, কুয়েতি বাংলাদেশি প্রবাসীরা কুয়েত দূতাবাস নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানান তথ্য দিতে থাকেন, এতে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
আরও পড়ুনঃ অবশেষে ওমান থেকে চালু হচ্ছে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট
এই পরিস্থিতিতে গত ১৩ই জুন কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কুয়েতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচার করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এক ভিডিও বার্তায় হুঁশিয়ারি দেন রাষ্ট্রদূত। সেখানেও তিনি বলেন ,‘দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফেসবুকে যেসব তথ্য দেয়া হচ্ছে, তা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে ওই সংসদ সদস্যের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
https://www.youtube.com/watch?v=ICYwzvYZ4uE
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post