প্রবাসীদের নারীর ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করছে একটি অসাধু চক্র। ইমোতে সুন্দর চেহারার ছবিসংবলিত মেয়ের আইডি থেকে মেসেজ দেওয়া হয় প্রবাসীদের। এরপর শুরু কথোপকথন ও ছবি আদান-প্রদান। সুন্দর ছবি ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় সহজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অনেক প্রবাসী। ভিডিওকলের প্রলোভনে কৌশলে প্রবাসীদের ইমো আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া হতো। পরে ইমো নম্বর পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টের প্রিভিয়াস হিস্টোরিতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নম্বর সংগ্রহ করে নানা বাহানায় হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। অথচ মেয়ের ছবিসংবলিত ইমো আইডিটিই ভুয়া। মেয়ে কণ্ঠে কথা বলতেন প্রতারক চক্রের পুরুষ সদস্য।
এমনই এক চক্রের মূলহোতাসহ চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সোহাগ আহমেদ, রিপন ইসলাম, সোহেল রানা ও লিটন আলী। গত সোমবার নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতাররা সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণা করে থাকে। প্রতারণা করার জন্য তারা মূলত মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী প্রবাসীদের টার্গেট করত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চক্রটির খপ্পরে পড়েন ইরাক প্রবাসী মো. সামছুল হক। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর তার ইমো হ্যাক করে বোন সুরাইয়ার কাছে কণ্ঠ নকল করে ভয়েস ম্যাসেজ দেওয়া হয়। ভয়েস ম্যাসেজে বলা হয়, সামছুল হক ইরাকের কোনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তিনি অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হবে। ভয়েস ম্যাসেজটি শোনার পর সুরাইয়া দ্রুত তার মা শামসুন্নাহারকে বিষয়টি জানায়। পরে ছেলের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ভয়েস ম্যাসেজে দেওয়া নম্বরে বিকাশ ও নগদে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পাঠান শামসুন্নাহার।
টাকা পাঠানোর দুই দিন পর ছেলের সঙ্গে কথা বলে মা জানতে পারেন, সামছুল হকের ইমো আইডি হ্যাক হয়েছে। আর তিনি অসুস্থও না এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন না। পরে তারা বুঝতে পারেন ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতারকরা তাদের টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে। পরে এ ঘটনায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন প্রবাসী সামছুল হকের মা শামসুন্নাহার।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, হাজারীবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরে চক্রটিকে গ্রেফতার করার পর দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। এই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে জায়গা-জমি কিনে ও বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির মাধ্যমে উন্নত জীবনযাপন করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post