মাত্র কয়েক সেকেন্ডের তান্ডবে লণ্ডভণ্ড তুরস্ক। স্বরনকালের ভয়াবহ ভুমিকম্পে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মরদেহ গুলো দাফন করতে মিলছেনা কবরস্থান। এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তুরস্কে। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৫ হাজার। আর এই মরদেহ দাফন করতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর পাজারকিকের একটি ফুটবল মাঠকে বানান হয়েছে করবস্থান। মাঠের দু’পাশে দু’টি গোলপোস্ট এখনও আছে, যা দেখে বোঝা যায়— এই অল্প কয়েক দিন আগেও ফুটবল খেলা হতো সেখানে।
কিন্তু সেসব অতীত এখন। মাঠজুড়ে এখন কেবল কবর আর গর্ত। ভূমিকম্পের অন্যতম এপিসেন্টার পাজারকিকে মৃতদেহের সৎকারে যেসব নতুন কবরস্থান গড়ে উঠছে, সেসবেরই একই এই মাঠটিও। যেসব গর্ত দেখা যাচ্ছে সেখানে, সেগুলো অসম্পূর্ণ কবর। প্রতিটি কবরের মাথায় লম্বালম্বিভাবে পোঁতা আছে একটি করে কাঠের তক্তা। কোনো কোনো তক্তার শীর্ষদেশ মুড়ে দেওয়া হয়েছে লাল রঙের স্কার্ফ বা ওড়নায়। মৃতের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে সেসব তক্তায়।
লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, মৃতদের নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও মৃত্যুর তারিখ সবার এক— ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ওই দিনই পর পর কয়েক দফা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।
ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৪৫ হাজারে। তুরস্কে প্রাণহানির হার অনেক বেশি। এ পর্যন্ত ২৭ হাজারেরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছের তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কাহরামানমারাশের বিভিন্ন শহর থেকে। উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকার কবরস্থানগুলোতে আর কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই, মরদেহের মিছিলও থেমে নেই। এ কারণে বাধ্য হয়েই কর্তৃপক্ষকে নিত্য নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হচ্ছে।
হুসেইন একিস নামের এক নারী নিজের ভাতিজি, স্বামী এবং দু’সন্তানকে কবর দিতে এসেছেন পাজারকিকের সেই ফুটবল মাঠটিতে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ উদ্ধার করতে আমাদের দশ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত ১০ দিন ধরে ধংসস্তূপ আগলে বসে ছিলাম আমরা।’ কাহরামানমারাশ প্রদেশের বিভিন্ন কবরস্থান সাম্প্রতিক এ বিপর্যয়ের সাক্ষ্য বহন করছে। যে কোনো কবরস্থানে গেলেই চোখে পড়ে হাজার হাজার নতুন কবর।
প্রায় প্রতিটি কবরস্থানের প্রান্তে অস্থায়ী তাঁবু দেখা যায়। একজন ইমাম সবসময় তাঁবুতে অবস্থান করেন। কোনো মৃতদেহ কবরস্থানে আনার পর তার জানাজার নামাজ পড়ানো ও ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করাই তার কাজ। ভূমিকম্পের পর থেকে এ পর্যন্ত কাহরামানমারাশ ও তার আশপাশের এলাকায় ১০ হাজার মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিন্ত্রণাধীন দপ্তরের পরিচালক বুরহান ইসলেইয়েন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post