দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন সিইসি। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপত্র বাছাই করেছি। একটি মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় গ্রহণ করেছি। তাই বাকিটি দেখার প্রয়োজন পড়েনি।’
মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় এ সময় তিনি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন। আজকেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান সিইসি। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জমা দেওয়া মনোনয়ন পরীক্ষার পর একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ (২৭ নম্বর আইন)-এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।’
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাবেক জেলা দায়রা জজ ও সাবেক দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। গতকাল রবিবার তার মনোনয়নপত্র ইসিতে গিয়ে জমা দেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কাউকে শপথ নিতে হবে। আইনে দুই মেয়াদের যে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোঃ আবদুল হামিদের দুই মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। তাই তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। সোমবার সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৮তম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে বঙ্গভবনে যাচ্ছেন।
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনার সন্তান মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্ম ১৯৪৯ সালে। ছাত্রজীবন থেকেই শুরু রাজনীতির পথচলা। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
ছাত্ররাজনীতি বা ছাত্রলীগের নেতা হিসেবেই যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছিলেন পাবনায় অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের সহচর হিসেবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হন। পরে যুবলীগ, বাকশালে যোগ দেন চুপ্পু।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তার প্রতিবাদ জানান। সে সময় গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কয়েক বছর জেল খাটেন সাহাবুদ্দিন। করা হয় ব্যাপক নির্যাতন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রাজনীতিতে কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়েন সাহাবুদ্দিন। সে সময় তিনি ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। জেলা জজ হিসেবে চাকরি শুরু করে বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে ওই ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয় সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান।
তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান রনি দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post