প্রবাসী। যাদের প্রতিটি ক্ষণেই যুদ্ধ করে যেতে হয়। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয় দিয়েই আবৃত তাদের জীবন। বেঁচে থাকতে যেমনি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়না, ঠিক মৃত্যুর পরেও অনেক প্রবাসীর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকে বিদেশের মর্গে বছরের পর বছর। বেঁচে থাকতে যেই প্রবাসী পরিবারের চিন্তায় প্রতিনিয়ত নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন, সেই প্রবাসী যখন মারা যার, তখন তার মরদেহ নিতে অনিচ্ছুক অনেক পরিবার।
আপনারা উপরে যার ছবি দেখতে পাচ্ছেন, তিনি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। নাম মো, গিয়াস উদ্দিন। সুনামগঞ্জ জেলার, ছাতক উপজেলার জাহিদপুর গ্রামে তার বাড়ি। সোনার হরিণের আসায় দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ ভাবে ইউরোপ যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় দালালদের নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ থেকে প্রায় দুই মাস আগে মাঝ পথেই তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি প্রবাস টাইমকে নিশ্চিত করেন ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতালয় প্রধান ওয়ালিদ ইসলাম।
হতভাগা গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর খবর দূতাবাস থেকে তার পরিবারের কাছে দেওয়া হলেও মরদেহ গ্রহণে সাফ অস্বীকার করে পরিবার। দূতাবাসের পক্ষথেকে নানা পদক্ষেপ নিয়েও গত ২ মাসে তার মরদেহ দেশে পাঠানো যায়নি। এ ব্যাপারে ইরান থেকে মুঠোফোনে প্রবাস টাইমকে ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, “লোকটা মারা গেছেন ২ মাস হলো। অনেক কষ্টে পরিবারকে রাজি করিয়ে লাশ দেশে প্রেরণের জন্য আবেদন করাই। এতে ছাতক উপজেলার ইউএনও নিজে সেই বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে আবেদন করান। পরিবার আবেদন করেছে ঠিকই কিন্তু লাশ গ্রহণ করতে তারা রাজি নয়।”
আফসোস করে দূতাবাসের এই কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুর পূর্বে এই প্রবাসীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দূতাবাস বহন করে। অথচ মৃত্যুর পর তার মরদেহটি পর্যন্ত পরিবার নিতে রাজি নয়। সবশেষে ১৬ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার এএসপি রণজয় চন্দ্র মল্লিক’র সহায়তায় সমস্যার সমাধান করে দূতাবাস। বর্তমানে তিনি নিজ দায়িত্বে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দিবেন এমনটি জানিয়েছেন।
এতদিন কেন তার মরদেহ নিতে রাজি হচ্ছিলো না পরিবার এমন প্রশ্ন করলে প্রবাস টাইমকে সহকারি পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা যেটা ধারণা করছি, উনার কিছু পৈতৃক সম্পত্তি আছে, উনার ভাইয়ের একটা ওয়াইফ (স্ত্রী) আছে। এখানে ভাগ বাটোয়ারার কিছু বিষয় আছে।’ এদিকে, প্রবাসীর প্রতি পরিবারের এমন অবহেলায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য প্রবাসীরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post