সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী মায়াকে (৩৭) হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১৫ জানুয়ারি) ভুক্তভোগীর ভাই মো. আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে রূপনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে রাতেই রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ২ আসামিকে গ্রেপ্তার করে রূপনগর থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন—শিপন (৪৫) ও মো. আসাদুল ইসলাম (৩৫)। গ্রেপ্তারকালে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা জ্যাকেট জব্দ করা হয়।
পুলিশ বলছে, তিন কারণে খুন হতে পারেন ওই নারী। ধর্ষণের পর হত্যা, অর্থের লোভ ও টাইলসের কাজ না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা। তিনি বলেন, আসামিরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সোমবার আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এক আসামির রিমান্ড ও আরেক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিক আমরা খতিয়ে দেখছি। আসামি দুজনের একজন ভিকটিমের বাড়িতে থাকতেন। অন্য আসামি পাশের আরেকটি বাড়ি থাকতেন। ভিকটিমের বাসায় তাদের আসা-যাওয়া ছিল। শিপন ভিকটিমের ভাড়াটিয়া ছিলেন। ভিকটিমের বাসায় আসামি শিপনের আসা-যাওয়া ছিল। নিহতকে তারা মামি বলে ডাকতেন। তারা ঘটনা আগের দিন সন্ধ্যায় ভিকটিমের বাসায় গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, চুরি-ডাকাতির উদ্দেশ্যে তারা বাসায় গিয়েছিলেন কি না বা আগে থেকে শত্রুতা ছিল কি না এসব বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখছি। তিন তলার ভাড়াটিয়া শিপন টাইলস মিস্ত্রি ঠিক করে দিয়েছিলেন। ভিকটিম মায়া তাদের মিস্ত্রিকে কাজ না দিয়ে অন্য মিস্ত্রি ঠিক করেছিলেন। এটাও হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে। সব বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখছি।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তারা (আসামিরা) কিছু একটা বলেছে আমরা শুনেছি। তারা কি উদ্দেশ্যে গিয়েছে আমরা এখনই বলব না। তারা খুনের কথা স্বীকার করেছে। খুনে ব্যবহৃত চাকু ও রক্তমাখা জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিকটিম যেহেতু নারী, একজন মহিলা পুলিশ অফিসার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সুরতহাল করেছেন। এই বিষয়ে কিছু যদি থাকে মেডিকেল রিপোর্টে আসবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামিরা ধরা পড়েছে, তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না তা এখনই আমরা বলতে চাচ্ছি না। তবে খুনের নেপথ্যে তিনটি মোটিভ হতে পারে। নিহত মায়ার ভাড়াটিয়ারা জানতেন তার স্বামী বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। এছাড়াও আরেকটা মোটিভ হতে পারে টাইলস মিস্ত্রি ঠিক করে দেওয়ার পরও অন্য মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করান। অন্য মিস্ত্রিরা কেমন কাজ করেছে দেখার কথা বলে আসামিরা মায়ার বাসায় প্রবেশ করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে দুজনই জড়িত।
উপ-পুলিশ কমিশনার জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, ভিকটিমের বাসার চালের বস্তায় টাকা ছিল। টাকা আসামিরা খুঁজে পায়নি। তারা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশ করেছে কি না সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টায় রূপনগর ‘ট’ ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাসা থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post