গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে গুলির ঘটনা নাড়া দিয়েছে রাজধানী বাসীকে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) অর্থ লেনদেনের ঘটনা ঘিরে গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরের কাছে গ্লোরিয়া জিন্স কফি শপের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে এক পথচারী এবং এক রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এই ঘটনার মুলে রয়েছেন এক ওমান প্রবাসী।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে গ্লোরিয়া জিন্স ক্যাফের পাশে আলফা স্টোর নামে একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি ৭৫ হাজার টাকা বিকাশ করেন। প্রথমে তিনি দোকানদারকে বলেন, আপনি ৭৫ হাজার টাকা বিকাশ করেন আমি টাকা দিচ্ছি। দোকানদার বিকাশ করার পর আর তিনি টাকা দিচ্ছিলেন না। যেহেতু টাকা দিচ্ছিলেন না, তখন দোকানদার তাকে আটক করে বলেন, তুমি টাকা না দিয়ে যেতে পারবে না। একপর্যায়ে আটক আরিফ তার ভগ্নীপতি মনির আহমেদকে ফোন করেন। ফোন পেয়ে মনির হোসেন ৪-৫ জন বন্ধুকে নিয়ে ফ্লেক্সিলোডের দোকানে আসেন এবং টাকা না দিয়েই আরিফকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন আশপাশের দোকানদাররা এসে বলেন, টাকা না দিয়ে আরিফকে নেওয়া যাবে না।
একপর্যায়ে মনিরের সঙ্গে আসা আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু তার সঙ্গে থাকা লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি সাত-আট রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ সময় আমিনুল ইসলাম নামের এক গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া আব্দুর রহিম নামের একজন ভ্যানচালকের পায়েও গুলি লাগে। এ সময় পাশে টহলরত পুলিশ সদস্যরা আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টুকে অস্ত্রসহ আটক করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির ঘটনার আগে দুপক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই সেখানে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্র উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ঝামেলা দেখে সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে এগোন। তখন সে এলোপাথাড়ি গুলি করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদ হাসান নামের একজন জানান, ঘটনার সময় তারা গ্লোরিয়া জিন্স কফির ভেতরে ছিলেন। বিকাল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে প্রথম গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এতে ভেতরে থাকা সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তারা সিট থেকে উঠে যান। এসে দেখেন কফিশপটির প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে গ্লাসের ভেতর থেকে দেখেন লাল টি-শার্ট ও জিন্স পরিহিত একজন ছোট সাইজের একটি অস্ত্র উঁচিয়ে মূল সড়ক ও শপটির মধ্যবর্তী পার্কিংয়ের ফাঁকা স্থানে হাঁটাচলা করছেন। ততক্ষণে মূল সড়কে অগণিত মানুষের ভিড় জমে যায়। কেউ কেউ তাকে ধরারও চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে তিনি উপরে তাক করে আরও চার রাউন্ড গুলি করেন। কেউ সেখানে গেলে তাকেও গুলি করার হুমকি দেন।
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও জানান, যখন বাইরে এসব চলছিল তখন ভেতর থেকে এক ব্যক্তি ৪টা ৮ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন। খবর পেয়ে ৩-৪ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত হন। এ সময় তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। এরপর পুলিশ সদস্যরা কফিশপের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানে কারও কাছে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। এরমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে গুলি করা ব্যক্তিকে নিয়েই পুলিশ স্থান ত্যাগ করে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গুলি চালিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মিন্টু (৪৬)। এ ঘটনায় মিন্টুসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক আবদুল ওয়াহিদ মিন্টু ছাড়া অপর চারজন হলেন- ওমান প্রবাসী মো. আরিফ হোসেন (২৪), মনির আহমেদ (৩৫), দোকানদার হাবিবুর রহমান আলিম (৩৫) ও দোকানদারের সহকারী মো. খলিল খান (১৮)। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি, ৩টি গুলির খোসা, ৪টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post