ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর মারধরের শিকার হয়েছেন প্রবাসী এক বাংলাদেশি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার বখতিয়ার আশরাফুল (২৬) রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা। তিনি সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
মারধরের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন মার্কেটিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের সৈয়দ আফ্রিদি ও রাহাত আলম রিজভী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের আরিফ আহমেদ, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের রাকিব উল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের আজিম সাকিব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের নাহিদ তমাল রোমান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের সৌমিক সরকার ও ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. আদনান। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যায় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বহিরাগত এক মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈয়দ আফ্রিদির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় বখতিয়ারকে দেখিয়ে দিয়ে ওই মেয়ে কিছু বলতে থাকেন। কথা বলার একপর্যায়ে আফ্রিদি উত্তেজিত হয়ে মুঠোফোনে কল করে তাঁর কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বন্ধুকে ডাকেন। পরে তাঁর বন্ধুরা একজোট হয়ে বখতিয়ারকে বেধড়ক কিল–ঘুষি দিতে থাকেন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উপপরিচালক সারোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে বখতিয়ারকে তাঁর নিজের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ নিরাপত্তা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা জোর করে সেই কক্ষে ঢোকেন। এ সময় ক্যাম্পাসের কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের পেটানোর হুমকি দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
মারধরের শিকার বখতিয়ার আশরাফুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এই ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছি। আসার পথে সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করি। এ সময় ওই মেয়ে আমার পাশাপাশি হাঁটছিলেন। একপর্যায়ে ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। পরে তাঁর ফোন নম্বর চাই আমি। কিন্তু ওই মেয়ে আমাকে বলেন, তাঁর বয়ফ্রেন্ড আছে এবং তিনি আমাকে ফোন নম্বর দিতে পারবেন না। পরে তাঁর কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আমি ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকি। হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে মারধর করেন।’
বখতিয়ার আশরাফুলকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আফ্রিদি বলেন, ‘আমার এক বান্ধবী সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ফটকে নেমে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিল। ওই সময় থেকেই বহিরাগত ওই ছেলে (আশরাফুল বখতিয়ার) আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। বিষয়টি আমার বান্ধবী আমাকে জানায়। পরে আমরা ওই ছেলেকে উত্ত্যক্ত করার কারণ জিজ্ঞাসা করি। একপর্যায়ে উপস্থিত সবাই তাকে মারধর করে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘উত্ত্যক্তের শিকার হওয়া মেয়েটি এবং মারধরের শিকার হওয়া ছেলেটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই আমরা ওই ছেলেকে আশুলিয়া থানা–পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি।’ আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের হাতে একজনকে তুলে দিয়েছে। আমরা ওই ব্যক্তির অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
সূত্র: প্রথম আলো
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post