প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এমনই এক জীবন, যাদের জীবিত অবস্থায় নানা কষ্ট এবং ভোগান্তি থাকলেও মৃত্যুর পরেও পিছু ছাড়েনা সেই ভোগান্তি! জীবনের শেষ সময়ে প্রিয়জন পাশে থাকা তো দূরের কথা, পরিবারের খোঁজ পর্যন্ত মেলেনা অনেকের ক্ষেত্রে। আর তাইতো বিদেশের অনেক মর্গে বছরের পর বছর পড়ে থাকে বেওয়ারিশ সেই মরদেহ। গত ৬ ডিসেম্বর ওমানে ঘটে এমনই এক দুর্ঘটনা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি মারা গেছেন ওমানে। অথচ জানেনা পরিবারের কেউ। অপরদিকে ওমান থেকে মৃত প্রবাসীর পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় হতভাগা প্রবাসীর পরিবারের সন্ধান পেতে ওমান থেকে প্রবাস টাইমের দ্বারস্থ হন নাজিম উদ্দিন নামে এক ওমান প্রবাসী ব্যবসায়ী।
পরবর্তীতে পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী প্রবাস টাইমের পক্ষথেকে তার জেলার ডিসি থেকে শুরু করে গ্রাম পুলিশ পর্যন্ত সকলের সাথে যোগাযোগ করা হয়। অবশেষে সন্ধান মেলে তার পরিবারের। পরবর্তীতে সকল প্রোসেসিং সম্পন্ন করে ২ জানুয়ারি ভোরে ঢাকায় পৌঁছে মরদেহ।
মৃত্যু প্রবাসীর নাম ওয়ারেস আলির (৬২)। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামে। বাবার মরদেহ নিতে ঢাকায় এসেছেন তার একমাত্র ছেলে। নিষ্পাপ শিশুটি বাক্সবন্দী বাবার কফিন দেখে শোঁকে স্তব্ধ। ওমান যাওয়ার পর বাবা আর দেশে ফেরেনি, এই রমজানে দেশে আসার কথা ছিলো, দু চোখে পানি নিয়ে এমনটাই জানালেন তার নিষ্পাপ ছেলে।
স্বামীর মরদেহ নিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন স্ত্রীও। জীবিত স্বামীর মুখ না দেখতে পারলেও শেষ বারের মত প্রিয় মানুষটির মুখ দেখার সুযোগ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানালেন প্রবাস টাইম ও নাজিম উদ্দিনের। পূর্ব পরিচিতি ছাড়াই তার স্বামীর মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করায় মন থেকে দুয়া করলেন পরিবারের লোকজন।
ওমান থেকে নাজিম উদ্দিন জানান, ২ ডিসেম্বর কাজের সন্ধানে ওমানের সুইক খাদারা নামক স্থানে একটি বাংলাদেশি কৃষি খামারে যান। উক্ত কৃষি খামারে কাজ না থাকায় তাকে অন্য কোথাও কাজের সন্ধান করতে বলা হলে তিনি অসুস্থ বলে দুইদিনের জন্য থেকে যান। অবশেষে ৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে আশেপাশে ঘুমন্ত প্রবাসীদের জাগিয়ে একটু লেবু পানি খেতে চান। প্রবাসীরা লেবুর শরবত খাওয়ালে কিছুক্ষণ পরেই মারা যান ওয়ারেস আলি। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে তার মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন নাজিম উদ্দিন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post