প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষ এখন এমন কিছু আবিষ্কার করছে, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কার অবাক করে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। এবার এমনই এক তাক লাগানো ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইয়েমেনের বিজ্ঞানী হাশেম আল-ঘাইলি। তার প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী নিজের গর্ভে শরীরের রক্ত-মাংস নিয়ে তিলে তিলে সন্তানকে গড়ে তোলার দিন হয়ত শেষের দিকে। মায়ের সঙ্গে নাড়ির টানও আর থাকছেনা! সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য আর মায়ের গর্ভের দরকার পড়বে না। কৃত্রিম গর্ভেই বড় হবে সন্তান। মায়ের শরীরের গন্ধ ছাড়াই জন্ম নেবে গবেষণাগারে।
মানুষ তৈরির এমনই এক আজব কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখছেন ইয়েমেনের এই মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি মূলত একজন মলিকিউলার বায়োটেকনোলজিস্ট। তিনি এমন এক গবেষণাগার তৈরির পরিকল্পনা করছেন, যেখানে একই সঙ্গে হাজার হাজার সন্তানের জন্ম হবে। কৃত্রিম গর্ভে বড় করা হবে ভ্রূণকে। একসঙ্গে কৃত্রিম উপায়ে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হবে ল্যাবরেটরিতে।
এখানেই শেষ নয়, মানুষের ইচ্ছে অনুযায়ী তৈরি হবে শিশু। রঙ-রূপ ইচ্ছামতো বদলে দিতে পারবেন মা-বাবা। থাকবেনা কোনো অসুখ-বিসুখ। স্প্যাম থেকে লড়াই করে জন্ম নিতে হবে না আর। মায়েদের প্রসব যন্ত্রণার মতো কষ্টও আর থাকবেনা। সরাসরি কৃত্রিম গর্ভ থেকেই পৃথিবীর আলো দেখাবেন গবেষকরা। এইসব শিশুদের বুদ্ধিমত্তাকে শান দিয়ে প্রখর করা হবে। কয়েক বছর পর হয়তো এমন ‘সুপার-বেবি’ই থাকবে পৃথিবীর ঘরে ঘরে। সেই দিন বেশি দূরে নয়- সম্প্রতি ৮.৩৯ মিনিটের এক অ্যানিমেশন ভিডিওতে এমন দাবিই করলেন ইয়েমেনের এই বিজ্ঞানী।
সম্প্রতি হাশেম অ্যানিমেশনে তৈরি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, বিশাল এক গবেষণাগার। তাতে পাশাপাশি বসানো রয়েছে হাজার হাজার কাচের গোলকের মতো কিছু যন্ত্র। এসব আধুনিক যন্ত্রের ভেতরেই তৈরি হচ্ছে মানবশিশু। তিনি দাবি করেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবে এমন গবেষণাগার তৈরি করা খুব একটা কঠিন নয়। ওই বিজ্ঞানীর তৈরি করা এ ভিডিও ইতোমধ্যেই অনলাইনে ঝড় তুলেছে।
হাসেম তার কল্পনাপ্রসূত এই গবেষণাগারটির নাম রেখেছেন এক্টোলাইফ। এই গবেষণাগারে থাকবে মোট ৭৫টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে থাকবে ৪০০টি কৃত্রিম গর্ভ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গবেষণাগারে একইসঙ্গে ৩ হাজার শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে। যে কাচের গোলকের মতো জিনিস ভিডিওতে দেখা গেছে, সেগুলোই হলো কৃত্রিম গর্ভ বা গ্রোথপড। এই কৃত্রিম গর্ভের ভিতরে আইভিএফ পদ্ধতিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে তৈরি করা হবে ভ্রূণ। সেই ভ্রূণ বড় হয়ে উঠবে এরই ভিতরে। জন্মের আগ পর্যন্ত শিশুর রক্তচাপ থেকে হৃদস্পন্দন, সবই মাপা যাবে এই যন্ত্রে।
বিজ্ঞানীর দাবি, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ নারীর মৃত্যু হয় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে। বিভিন্ন জটিলতায় মৃত্যু হয় বহু নবজাতকেরও। নতুন এই পদ্ধতিতে একেবারে সমাপ্ত হয়ে যাবে সেই সমস্যা। শুধু তা-ই নয়, নিজের সন্তানের মধ্যে বাবা-মা কোন কোন গুণ দেখতে চান তা-ও ঠিক করা যাবে শিশুর জন্মের আগেই। কৃত্রিমভাবে জিনগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঠিক করা যাবে হবু সন্তানের গায়ের রং, উচ্চতা, শারীরিক গঠন, গলার স্বর কিংবা বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলো। পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে অনেক জিনগত রোগও নির্মূল করা যাবে বলে দাবি করেছেন ওই বিজ্ঞানী। এছাড়া বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে যে দম্পতিরা সন্তান নিতে পারছেন না ও যেসব দেশ জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যায় ভুগছে, তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে এই ব্যবস্থা, এমনই মত হাশেমের।
এদিকে, তার এমন আবিষ্কার নিয়ে আপত্তি রয়েছে নানা মহলে। প্রকৃতিকে এড়িয়ে মানবদেহে জিনগত বদল আনা বিবর্তনের পথে ঝুঁকির কাজ হতে পারে বলেও মত অনেকের। তবে আইনগত অনুমোদন পেলে খুব শীঘ্রই কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হবে মানুষ এমনটিই জানিয়েছেন ইয়েমেনের এই বিজ্ঞানী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post