উন্নত জীবনের আশায় মানুষ পাড়ি দিচ্ছে অন্য দেশে। কিন্তু ঝুকিপূর্ণ এ যাত্রায় প্রতি বছর দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকও। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত আট বছরে অন্তত ৫১ হাজার অভিবাসীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ (ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেন্টস ডে) উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অভিবাসীদের অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার।
এটি ভুলে গেলে চলবে না। কারণ যারা ভিটেমাটি ত্যাগ করে দেশ ছাড়ে তাদের অসহায়ত্বের কথা গুরুত্ব দিতে হবে। সবাই বিলাসী জীবনের জন্য মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করেন না। নিরাপদ আশ্রয়, উন্নত ভবিষ্যৎ এবং মর্যাদাশীল জীবনযাপনের অভিপ্রায়েই অধিকাংশ মানুষ প্রিয়-পরিচিতজনের সান্নিধ্য ত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন।
মহাসচিব উল্লেখ করেন, মানুষের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে মানব পাচারকারীরা। মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার পরও গভীর জঙ্গলে কিংবা ভয়ংকর পানির স্রোতে ঠেলে দেয় দালাল চক্র। এর ফলে গত আট বছরে কমপক্ষে ৫১ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরও অনেক মানুষ, যারা নিখোঁজ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের কাছে। আর এসব ভিকটিমের সবাই কারও বাবা, মা, বোন, সন্তান, ভাই, ভাতিজা অথবা খালা।
অর্থাৎ তারা আমাদেরই একজন ছিলেন। এ জন্য তাদের অধিকারকে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই। কেন তারা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। তাহলেই হয়তো বিশ্বের বিরাট সংখ্যক মানুষের সত্যিকার অর্থে কল্যাণ করা সম্ভব হবে। মহাসচিব আরও উল্লেখ করেছেন, প্রতি বছর কমপক্ষে ২৮ কোটি মানুষ দেশান্তরী হচ্ছে। মহাসচিব বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সাধ্যমতো চেষ্টা করি এমন করুণ মৃত্যু ঠেকাতে।
আর এটা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের হদিস উদঘাটনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো দরকার। দেশত্যাগের সময় যারা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিংবা খাদ্যাভাবের শিকার, তাদের জন্য জরুরি চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমরা যদি কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারি তাহলেই দেশান্তরী হওয়ার প্রবণতা একেবারে কমে আসবে।
অর্থাৎ নিজ দেশে যদি নিরাপদ জীবন, কর্মসংস্থান এবং মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের পরিবেশ অটুট থাকে তাহলে অভিবাসী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। অভিবাসী দিবসের আলোকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রধান গিলবার্ট এফ হোঙবো বলেন, বিভিন্ন দেশে ১৬ কোটি ৯০ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষাতেও আন্তরিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার পেলে অভিবাসীরা অনেকটা স্বস্তিতে দিনাতিপাতে সক্ষম হবেন। স্মরণ করা যেতে পারে, অভিবাসী শ্রমিকের অনেকেরই কাজের অনুমতি না থাকায় গাধার খাটুনি খাটছেন, অথচ ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। একশ্রেণির ব্যবসায়ী কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের সঙ্গে লাগাতার প্রতারণা করছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post