থাকবো ভালো, রাখবো ভালো দেশ। বৈধপথে প্রবাসী আয়, গড়বো বাংলাদেশ। এই শ্লোগানে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। কিন্তু আজ প্রবাসীরা ভালো নেই। আর তাই কমেছে প্রবাসী আয়। এই প্রবাসীদের মধ্যে একটা অংশ সোনার হরিণের আশায় অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার সময় বন্দী হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের হাতে। তাদের হাত থেকে ভাগ্য গুণে গুটি কয়েকজন ফিরলেও অধিকাংশই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। সম্প্রতি ইরানে এমন এক ভয়াবহ ঘটনার সন্ধান পেয়েছে প্রবাস টাইম।
এটি কোনো সিনেমা বা নাটকের কল রেকর্ড নয়। এটি ইরানে মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এক বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবন বাঁচানোর কল রেকর্ড। এভাবেই প্রবাস থেকে ফোনে আর্তনাদ জানান মাফিয়াদের হাতে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা। কপাল ভালো থাকলে জীবন আর নাইলে অজ্ঞাত মৃত্যু নিশ্চিত। এভাবেই কতো মানুষের প্রাণ গেছে মানবপাচারকারিদের হাতে তার কোন হিসাব নেই, তবে কিছু গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে ইরানে।
২০১৫ সালের দিকে আলোচনায় আসে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরের কথা। সেখানেও অনেক বাংলাদেশীদের ভাগ্য পুড়েছিল পাচারকারীর হাতে। থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া ছিল নিয়মিত গন্তব্য। তবে বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হতো থাইল্যান্ডের ওই জঙ্গলে। সম্প্রতি ইউরোপ যাওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে ওমানকে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।
মাফিয়াদের হাত থেকে ফেরা এমন প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দুবাই, ওমান, কুয়েত থেকে অথবা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি গ্রিস, সাইপ্রাস বা অন্যান্য উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশীদেরকে সাগরপথে বন্দর আব্বাসে আনা হয় অথবা বিমানে তেহরান আনা হয়। তারপর তাদেরকে তুলে দেয়া হয় মাফিয়াদের হাতে। এই মাফিয়ারা তাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনায়। এই মাফিয়া চক্রে বাংলাদেশী, পাকিস্তানি, আফগানি এবং টার্কিশ নাগরিকেরা থাকে। টাকা দিতে না পারলে মেরে ফেলা হয়,কখনো জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ইরান পাথুরে পাহাড়ের দেশ হওয়ায় মাফিয়াদের আস্তানা পুলিশের পক্ষেও খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না। কোন গুহায় তাদের ডেরা তা কেউই বের করতে পারে না। যদি কারো ভাগ্য ভালো থাকে পালিয়ে বের হতে পারে তখন দূতাবাস তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসও। প্রবাস টাইমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিলেন দূতালয় প্রধান ওয়ালিদ ইসলাম।
দূতাবাসের এই কর্মকর্তা জানান, আগের বার বন্দর আব্বাস গিয়ে দেখেছিলাম তাদের সেন্ট্রাল কবরস্থানে ১৪ টা বাংলাদেশী নাগরিকের কবর আছে, এবার গিয়ে দেখা গেল ৪১ টা। অথচ, সেগুলো সম্পর্কে দূতাবাস জানে না। কারণ, মাফিয়ারা কোন প্রসেসে কিভাবে তাদের মেরে দাফন করে তা পুলিশের পক্ষেও জানা সম্ভব নয়। অন্যান্য কবরস্থানে গেলে হয়তো আরও কবর হয়তো পাওয়া যাবে যার সম্পর্কে দূতাবাস কিছুই যানে না।
সাগর পথে মানবপাচারের ঘটনা পুরো হলেও এই ইরানের বন্দর আব্বাস হয়ে মানবপাচারের ঘটনা বেশ নতুন। লিবিয়া হয়ে সাগর পথে ইউরোপ প্রবেশের পাশাপাশি দালালের মাধ্যমে মানবপাচারকারীরা এখন নতুন নতুন পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইউরোপের প্রলোভন দেখিয়ে ইরানে এনে করা হয় অমানবিক অত্যাচার। পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার জন্য হাত পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলা, নখ উপড়ে ফেলাসহ ছুড়ির জখম পাওয়া যায় সাড়া শরীরে। অপহরণকারী মাফিয়া চক্রের হাত থেকে পালিয়ে আসলে ইরানে দূতাবাসের সেইফ হোম না থাকায় তাদের আশ্রয় দেওয়া যায় না। তাতে দেশে পাঠাতে সময় লেগে যায় কয়েক মাস। ফলে তাদের নিযুক্ত করতে হয় অমানবিক কাজে। কাউকে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, কাউকে স্টিল ফ্যাক্টরিতে নির্দিষ্ট বেতন এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ পাঠাতে হয় একেবারে নিরুপায় হয়ে। দূতাবাস জানায়, প্রতিমাসে অন্তত ১৫০ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বৈধ পথে অভিবাসনের অনুরোধ জানানো হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post