কুয়েতে অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের মামলায় নতুন মোড় নিয়েছে। পাপুলকে দেশটির অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মদদ জুগিয়েছেন এমন খবর প্রকাশ করেছে কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস। ঘুষ নিয়ে কুয়েত সরকারের যেসব কর্মকর্তা আইন বহির্ভূত কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের নাম প্রকাশ করেছেন পাপুল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের মধ্যে একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বেসামরিক কর্মকর্তা। অন্যজন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে এমপি পাপুল তাদের নাম প্রকাশ করলেও কুয়েতি গণমাধ্যমে জড়িত এসব ব্যক্তির নাম-পরিচয় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতি মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা যেদিন পাপুলের ওই কোম্পানিতে গিয়েছিলেন, সেদিন সেখানকার স্থানীয় সব কর্মীকে ছুটি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে। সে মোতাবেক পাপুল স্থানীয় কর্মীদেরও ছুটি দিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
এছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তাকে ১১ লাখ কুয়েতি দিনার প্রদান করেন পাপুল। এর মধ্যে ১০ লাখ কুয়েতি দিনারের একটি চেক ছিল। বাকি এক লাখ দেওয়া হয় নগদ। বিনিময়ে তিনি তাকে অবৈধভাবে কর্মী নিতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। জানা গেছে, কুয়েতি পাবলিক প্রসিকিউশনের কাছে সেই চেকের কপিও উপস্থাপন করেছেন এমপি পাপুল।
কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মূর্তজা মামুনকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ১১ জন বাংলাদেশি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্যের পাশাপাশি কুয়েতে ভিসা নবায়নের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শোনার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে যে ১২ জনকে ওই মামলার সাক্ষী হিসেবে কুয়েতে নেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ১১ জনকেই রবিবার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর একজন দেশটিতে আত্মগোপন করেছেন। বাংলাদেশের আটক সাংসদ কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন। কুয়েতের ওই সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের সাংসদের কাজ পাইয়ে দিতেন এবং সাংসদের হয়ে মধ্যস্থতা করতেন।
আরও পড়ুনঃ ওমানে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
এদিকে, পাপুলের আইনজীবী আদালতের কাছে যেকোনো শর্তে জামিনের জন্য আবেদন করেন। আদালতকে তিনি বলেন, পাপুল বাংলাদেশের একজন এমপি। তাকে জামিন দেওয়া হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি কুয়েত ত্যাগ করবেন না। এদিকে কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার এক নাগরিক এবং মিসরের অন্য এক নাগরিককে চলমান তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করেছেন। উল্লিখিত ওই দুজন আটক সাংসদের হয়ে কুয়েতের সরকারি দপ্তরগুলোতে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আরও দেখুনঃ প্রবাসীদের নিয়ে যা বললেন মিশা সওদাগর ও র্যাবের এই কমান্ডার
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post