অভুক্ত, অশিক্ষিত, অপ্রাপ্তি, ‘কিছু নাই’ টাইপ লোকজনকে স্বপ্ন দেখানোর একটা অস্ত্র হচ্ছে ‘গনতন্ত্র’। তোমরা গনতন্ত্র যদি পাও, তাহলে সব পাবে। ঘর বাড়ি, টাকা পয়সা, চাকরি ব্যাবসা বানিজ্য.. সব। কর আন্দোলন, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও। বাধ্য হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার গনতন্ত্র দিবে। আহা কি মজা! নিজের যা কিছু চাই, এবার চাইতে পারব, না দিলে কেড়ে নিতে পারব। আহা গনতন্ত্র!
এই তথাকথিত গনতন্ত্রের ক্যামোফ্লেক্সে জনগনকে ঠেলে দিয়ে সবাই আখের গোছাতে ব্যাস্ত। দিন শেষে লাভের ১৬ আনা আরেকজনের পকেটে, যে কিনা এতদিন ধরে সবাইকে গনতন্ত্রের ছবক দিতো! হায়রে দুনিয়া।
এর বিপরীতে দরকার একজন শক্ত একনায়কের। এসব ফালতু গনতন্ত্রের কেওয়াছকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এরকম এক মহা নায়ক ছিলেন এইকয়দিন। নিরবে নিবৃত্তে কাজ করে গেছেন। প্রচন্ড আধুনিক এবং বুদ্ধিমান এই শাসক বুঝে ফেলেছেন আমি জনগনকে কথার ফুলঝুরি ছিটিয়ে সাময়িক তুষ্ট হয়তো করতে পারবো, কিন্তু দিন শেষে আমি দেশটাকে তাদের জন্য কিরকম করে রেখে যাচ্ছি, এটাই ওনার হালখাতা হবে।
কিছুই ছিলো না দেশে। মাত্র ৬ মাইল পাকা রাস্তা ছিলো। আজ কেউ গিয়ে দেখে আসুক, ঐদেশের রাস্তাঘাট কতদূর চলে গেছে! উনি দেখলেন একটা হসপিটালও নাই এই দেশে, কি কষ্ট কারো কোন অসুখ বিসুখে! আজ শতভাগ লোক সম্পূর্ণ বিনাখরচে সর্বোচ্চ লেবেলের চিকিৎসা পেয়ে আসছে। হসপিটাল বেইসড চিকিৎসা সেবাকে তিনি এমন এক লেবেলে নিয়ে গেছেন, যেখানে কেউ কোনদিন কল্পনাই করেনি। সেই মানের কোন স্কুল কলেজই ছিলো না, উনি বললেন মানুষজন শিক্ষিত নাহলে কি করে দেশ উন্নত হবে।
আজ ওমানের কোথায় নেই স্কুল? কে লেখাপড়া করে না এখানে? বসবাস করতে হলে শুধু রাস্তাঘাট বানালে হবে? থাকবে কোথায় তারা? শুধু বাড়িঘর বানিয়েই দেননি তিনি সেখানে ইউটিলিটি দিয়েছেন, যোগাযোগের সুবিধা করে দিয়েছেন, মানুষজনকে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার ব্যাবস্থা করেছেন।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক সুন্দরের অপরূপ লীলাভূমি ওমান
এই তো গেলো নিজ দেশ সামলানো। বিদেশনীতি কেমন ছিলো? কেউ যদি অবজারভ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন কেমন করে ব্রিটিশ আমেরিকান শাসকদের কাছে নিজেকে একটা লেবেলে রাখা যায়, কেমন করে এই অঞ্চলের প্রভু সৌদ পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখা যায়, কেমন করে শিয়া সুন্নি কুর্দি ঝামেলায় মধ্যপ্রাচ্যে আলাদা স্বত্ত্বা টিকিয়ে রাখা যায়, কেমন করে ‘আরব বসন্তে’ নিজেকে মানিয়ে টিকে থাকা যায় ইত্যাদি তার কাছ থেকে শেখা উচিত।
সব শাসকরাই ‘জনগন আমাকে দারুন ভালোবাসে’ এরকম মিথ তৈরি করে রাখে, প্রচারটা সারাজীবন সেভাবেই করে। আমার প্রবাস জীবনে ওমানে ৮ বছর থেকে তাদের সম্পর্কে জেনে এটাই বুঝলাম যে, সুলতান কাবুসের সে চেষ্টা করার কোন দরকার নাই, মানুষের অন্তরে তাদের ভালোবাসার জায়গায় তিনি এমনভাবে মিশে আছেন, যেটা অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য আর এককথায় অসাধারণ!
আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক ছিলেন ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের সহায়তা নিয়ে তিনি তাঁর পিতাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর দেশটির তেল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওমানকে উন্নয়নের পথে আনেন। সুলতান কাবুস ওমানের জনগণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন এবং তার হাতেই ছিল সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র।
আরও পড়ুনঃ শান্তিপ্রিয় একটি দেশের নাম ওমান
গত প্রায় পাঁচ দশক যাবত সুলতান কাবুস ওমানের রাজনীতি একচ্ছত্র ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ওমানের জনসংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ, যার মধ্যে ৪৩ শতাংশ বিদেশী নাগরিক। ২৯ বছর বয়সে তিনি তার বাবা সাঈদ বিন তৈমুরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তারা বাবা ছিলেন ভীষণ রক্ষণশীল। তিনি ওমানে অনেকে বিষয় নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল – রেডিও শোনা এবং সানগ্লাস নিষিদ্ধ করা।
ওমানে কে বিয়ে করতে পারবে, কে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, এমনকি কে দেশত্যাগ করবে – এসব কিছুর সিদ্ধান্ত তিনি দিতেন। পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সুলতান কাবুস ওমানে আধুনিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন। তখন ওমানে মাত্র ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং তিনটি স্কুল ছিল। সুলতান কাবুস তখন ঘোষণা করেন, দেশটির তেল সম্পদ কাজে লাগিয়ে তিনি দেশের আধুনিকায়ন করবেন।
আরও পড়ুনঃ ওমানের সহজ হলো বিদেশি বিনিয়োগ আইন
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আয়োজন করছি, ওমানও তাদের সুলতানের ৫০ বছর শাসনের উৎসবের আয়োজন করছে। পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের অবস্থা ওমান থেকে ভালো ছিলো, আর আজ……আফসোস!আফসোস!
লেখকঃ মিজানুর রহমান ভুঁইয়া, ওমান প্রবাসী
আরও দেখুনঃ সুলতান কাবুসের সেই রহস্যময় চিঠিতে কি লেখা ছিল?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post