আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর মানেই যেন এক অভিজাত এবং বিলাসবহুল স্থান। ঝাঁ চকচকে পরিবেশ, মোলায়েম মেঝে, ঝলমলে আলো, দোকান, সুন্দর পোশাক পরা লোকজন, সুস্বাদু খাবারের গন্ধ সব মিলিয়ে একটা বেশ জমকালো ব্যাপার। বিমান বন্দরের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে বিমান পর্যন্ত সবই যেন ছবির মতো সুন্দর এবং সাজানো। যাত্রীরা বিশালাকার এই জায়গাটিতে বিমানের জন্য অপেক্ষা করেন, মনের আনন্দে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু জানেন কি, বিশ্বের এমন কিছু বিমান বন্দর রয়েছে যেগুলিকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে? এই বন্দরে বিমান অবতরণের সময় প্রত্যেক বিমান চালকের প্রতিবারই বুক ধড়ফড় করে ওঠে। সেই জন্য অতি অভিজ্ঞ এবং নির্দিষ্ট কয়েক জন পাইলট ছাড়া এই সব বিমান বন্দরে বিমান অবতরণের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয় না। এঁরা সকলেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। নবাগত পাইলটদের ভুলেও এই স্থানে বিমান অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয় না। আজকের ভিডিওতে জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এমন কিছু বিমানবন্দর সম্পর্কে।
বিশ্বের সবচাইতে মারাত্মক ও বিপদজনক বিমানবন্দরের তালিকা তৈরি করলে উপরের তালিকায় থাকবে ভুটানের পারো বিমানবন্দরের নাম। জেনে অবাক হবেন, সর্বসাকুল্যে মাত্র ৮ জন পাইলটকে এই বিমানবন্দরে অবতরণ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় মাইল উপরে অবস্থিত, যার চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ১৮,০০০ ফুটেরও দীর্ঘ সব চূড়া। অপরদিকে বিমানবন্দরটির রানওয়েটি মাত্র ৬,৫০০ ফুট লম্বা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এমন উঁচুতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এত ছোটো রানওয়ে পৃথিবীতে খুব একটা নেই। তাই এই রানওয়েতে অবতরণের সময় যাত্রীদের স্নায়ুর উপর যে অনেক বেশিই চাপ পড়ে তা বলাই বাহুল্য।
এরপর রয়েছে ফ্রান্সের করচিভেল এয়ারপোর্ট। এই বিমানবন্দর সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৬ হাজার ৫৮৮ ফিট উঁচুতে অবস্থিত। এটির রানওয়ে মাত্র ১৭৬২ ফুট লম্বা। ফ্রান্সে অবস্থিত এই এয়ারপোর্টের রানওয়েটি খুবই ছোট। উঁচু পাহাড় এবং বরফ দ্বারা আবৃত এই এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিং করাটা খুবই বিপদজনক। ছোট আকারের বিমানগুলি এখানে ওঠানামা করে, মেঘ এবং ঘন কুয়াশার জন্য এখানে বিমান অবতরণ করাটা খুবই বিপদজনক। বিশ্বের ভয়ংকর ও বিপদজনক এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে একটি। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য ল্যান্ডিং করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটিকে বিশ্বের তৃতীয় ভয়ংকরতম এয়ারপোর্টে হিসাবে ধরা হয়।
এরপর রয়েছে নেদারল্যান্ডের প্রিন্সেস জুলিয়ানা এয়ারপোর্ট। এ বিমানবন্দরটি রয়েছে পূর্ব ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সেন্ট মার্টিনে। নেদারল্যান্ডের যে অংশে এখনো নিয়মিত বিমান অবতরণে আগে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পাইলটদের বলা হয় তার একটি এই বিমানবন্দর। এ অঞ্চলের মধ্যে এটি ২য় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং স্ট্রিপ খুবই ছোট যা প্রায় ২১৮০ মিটার মাত্র। এত ছোট রানওয়ের আসল কারণ ছিল যুদ্ধবিমানের ছোট রানওয়ে ধরে ছুটে চলা। যাত্রী পরিবহনের চেয়েও তাই বিশেষ দৃষ্টি ছিল যুদ্ধবিমানগুলোতে করে গোলাবারুদ পরিবহন।
এরপর রয়েছে আইসল্যান্ডের আইস রানওয়ে বিমানবন্দর। বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম এই বিমানবন্দরে কোনো সত্যিকারের রানওয়েই নেই। বিমান যেখানে অবতরণ করে সেটি শুধু পরিষ্কার করা বরফ এবং তুষারে আচ্ছাদিত স্থান। এখানকার রানওয়েতে অবতরণের সময় যে বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হয় তা হলো বিমানটির ওজন। এজন্য অবতরণের পূর্বেই প্রত্যেকটি বিমানের যথাযথ ওজন মাপা হয়। কারণ ওজন একটু বেশি হলেই তা বরফের রানওয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আর অতিরিক্ত ওজনের কারণে যে সমস্যা হবে তা হলো বিমানটি বরফের রানওয়েতে থাকা তুষারে আটকেও যেতে পারে।
এরপর রয়েছে নেপালের লুকলা এয়ারপোর্ট। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৯ হাজার ৩৩৪ ফিট, এই এয়ারপোর্টের রানওয়ে খুবই ছোট এবং ভয়ংকর, এটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৭২৯ ফিট। এখানকার পাহাড়ি হাওয়া এবং ভয়ংকর প্রাকৃতিক পরিবেশ এই এয়ারপোর্টকে আরো বিপদজনক করে তুলেছে। শুধু তাই নয় এয়ারপোর্টের রানওয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে শুরু হয়েছে গভীর খাঁদ। রানওয়ের শেষ প্রান্তে এই ৬০০ ফুট গভীর খাদে পরার মানে হচ্ছে সাক্ষাত মৃত্যু অর্থাৎ এই এয়ারপোর্টে উড়োজাহাজ টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং করার সময় পাইলটকে খুবই সজাগ থাকতে হয়। এখানে একটি ভুল ডেকে আনতে পারে হাজারো মানুষের মৃত্যু। এখানে বেশিরভাগ সময় ছোট আকারের বিমানগুলি ওঠানামা করে। উচ্চতা এবং ভয়ংকর ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এই এয়ারপোর্টটি বিশ্বের ভয়ংকর এয়ারপোর্ট গুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দিল ওমান
প্রবাসীদের জরিমানা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করলো
ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ
সিআইপি নির্বাচিত হচ্ছেন ৬৭ প্রবাসী, সংখ্যায় দ্বিতীয়
ক্ষোভ আর অভিমানে হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post