ওমানের সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন হামরিয়ায় । কাজের কারণে ওমানের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া লাগলেও এই হামরিয়ার সাথে কানেকশন থাকে সবার। সন্ধ্যার পর কাজের জন্য এভাবেই ভিড় করেন প্রবাসীরা। টাইলসের মেশন, প্লাম্বার, ইলেক্ট্রিশিয়ান সহ সব ধরণের দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক আসেন এই হামরিয়াতে কাজের সন্ধানে। এক বছর পূর্বে এখানে দক্ষ লোকের অভাব থাকলেও বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
প্রবাসীরা জানান, কাজের সংকটের সাথে বেতনও আগের থেকে অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। আগে নির্মাণ খাতে কাজ করলে একজন হেল্পার দিনে ৮-৯ রিয়াল আর দক্ষ কর্মী ১২ রিয়াল আয় করতে পারতো। এখন সেই হেল্পার বেতন পাচ্ছে দৈনিক ৪-৫ রিয়াল। প্রায় ৫০ শতাংশ বেতন কমে গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই শ্রমবাজারে বর্তমানে কাজের সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন কাজ না থাকায় এবং অধিক সংখ্যক লোক ফ্রি ভিসায় ওমান যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সংকট। এ নিয়ে বিপাকে আছেন প্রবাসীরা। এছাড়া ওমানিকরনের কারণে ছোট হয়ে এসেছে প্রবাসীদের কাজের ক্ষেত্র। প্রবাসীদের কাজের জায়গা ছিল নির্মাণ খাতে। প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মীরা দেশটির নির্মাণ খাতে কাজ করে। তবে সেদেশে নানা উন্নয়নমূলক কাজ কমে আসায় তার প্রভাব পড়েছে এই খাতে। আর তাতে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। নতুন কাজ নেই আর পুরানো কাজে বেতন কম – এ নিয়ে উভয় সংকটে আছেন তারা।
মহামারির কারণে ৩ লাখেরও বেশি ওমানে কাজ হারিয়েছেন। এদের অধিকাংশ ছিল প্রবাসী। করোনার কারণে ওমানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেসরকারি খাত। চাকরি থেকে ছাঁটাই করা অধিকাংশ কর্মী ছিলেন নির্মাণখাতে। কাজ হারিয়ে ২০২১ সালে ৫৮ হাজারেরও বেশি প্রবাসী ওমান ছেড়েছেন। এরপর আবার ২০২১ সালের শেষ দিকে প্রবাসী জনসংখ্যা বাড়তে থাকে ওমানে।
তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওমানের অর্থনীতির পরিবর্তনের নানা কারণ আছে। আর্থিক খাতে সংস্কার, বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি তেলের উৎপাদনও নির্ভর করে। এছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল ওমান সরকার।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি মো.ইয়াসিন চৌধুরী (সিআইপি) প্রবাস টাইমকে বলেন, “বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। আগে যেভাবে শ্রমিকদের ডিমান্ড ছিল এখন স্বাভাবিকভাবে কাজ কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি তাই বেতন অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। এছাড়াও বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা ফ্রি ভিসা নিয়ে ওমানে আসছে তাদের আসলে কোন চাকরি নেই। তাই আমার অনুরোধ থাকবে যেন কেউ ফ্রি ভিসা নিয়ে ওমানে না আসে আর ওমানে ফ্রি ভিসা নামক কোন ভিসা নেই, ভিসা দালালদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশ থেকে ওমানে এসে প্রবাসীরা বেকায়দায় আছে। বাংলাদেশ থেকে ওমানে আসার আগে যেন তাদের কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করে ওমানে আসেন।”
এমন পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় তিনি আরো বলেন, “যদি কোন প্রবাসী বাংলাদেশী ওমানে আসতে চায় অবশ্যই তাকে তার মালিকের সাথে এগ্রিমেন্ট করে কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করে ওমানে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন দালালের মাধ্যমে লেনদেন করে যেন ওমানে না আসেন। আশা করি বিশ্ব পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখন অবশ্যই শ্রমিকের চাহিদা বাড়লে মানুষের নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে ওমান সরকার খুবই আন্তরিক তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দিল ওমান
প্রবাসীদের জরিমানা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করলো
ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ
সিআইপি নির্বাচিত হচ্ছেন ৬৭ প্রবাসী, সংখ্যায় দ্বিতীয়
ক্ষোভ আর অভিমানে হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post