কে না চায় সফলতা। কেউ থাকতে চান না পিছিয়ে। একধাপ এগিয়ে যাওয়ার গল্প কার না ভাল লাগে। এক কথায় সফলতার গল্পটা সৃষ্টির সূচনা থেকেই মানুষকুলকে ঘিরে আবর্তিত। জীবনে সবাই সুখী ও সফল হতে চায়। সফলতা বলতে আমরা বুঝি ভালো ফ্ল্যাট, সুন্দর বাড়ি, দামী গাড়ি, আর্থিক নিশ্চয়তা সর্বোপরি একটি সুন্দর ও গোছানো জীবন যাপনের অধিকারী হওয়া ইত্যাদি। সফলতা শব্দটি মুখে যতো সহজে উচ্চারণ করা যায় ততো সহজে বাস্তব জীবনে প্রতীয়মান করা যায় না। মুখে বলার চেয়ে করাটা খুব কঠিন।
সফল ব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক ‘প্রবাস টাইম এক্সক্লুসিভ‘ এর প্রথম পর্বে থাকছে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এক অজপাড়াগায়ের কৃতি সন্তান ড. যশোদা জীবন দেব নাথ সিআইপি কে নিয়ে।
আজকের বাংলাদেশের অটোমেটেড ট্রেলার মেশিন, যাকে আমরা এটিএম বুথ নামেই চিনি, সর্বশেষ জরীপ অনুযায়ী সারাদেশে প্রায় এগারো হাজার এটিএম বুথ রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের। এর মধ্যে বেশীরভাগ এটিএম বুথই দেশের বৃহত্তম এটিএম বুথ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেকনোমিডিয়া লিমিটেডের। অত্র প্রতিষ্ঠানের যিনি কর্ণধার, তার নাম হচ্ছে ড. যশোদা জীবন দেব নাথ। ফরিদপুর জেলার একজন গর্বিত সন্তান। তিনি বাংলাদেশ সরকার থেকে ঘোষিত একজন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)।
বর্তমানে ঢাকার বুকে আলিশান বাড়ী, নিজস্ব রিসোর্ট সহ অঢেল সম্পত্তির মালিক তিনি। ঢাকার বুকে BMW গাড়ী নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি, যা দেখে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হয়। তবে তার আজকের এই অবস্থানে আসতে কি পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তা শুধুমাত্র তিনিই জানেন। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রাতে ড. দেব নাথ তার অতীত কিছু ঘটনা তুলে ধরে ‘আমার জীবনের গল্প-১’ নামে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তার ছোট্ট সময়ের কিছু কষ্টের কাহিনী তুলে ধরেন। আমাদের পাঠকদের জন্য ড. যশোদা জীবন দেব নাথের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হইলো।
“আমার_জীবনের_গল্প_পর্ব_১
মেঘলা আকাশ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে তার সাথে মেঘের গর্জন, সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিল ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। গদ্যময় পৃথিবীর নির্মমতা আমাকে গ্রাস করেছিল দিনটা ছিল মঙ্গলবার ১৯৮৭ সাল। আকাশে প্রচণ্ড মেঘ করেছে এদিকে ঘরে খাবার নেই! বাবা মার বয়স হয়েছে বাড়ির বড় সন্তান হিসেবে আমার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। গত তিনদিন ধরে না খেয়ে থাকার মত করে আমরা বেঁচে আছি, প্রথম দিন ভুট্টার আটা দিয়ে কোনরকম রুটি করে খাওয়া হলো, দ্বিতীয় দিন ঢেঁকিতে ছাটা গমের আটা দিয়ে কোনরকম পার করলাম, এরপর খাওয়ার মত আর কিছুই নেই।
অভাব আর দারিদ্রতা মানুষকে যখন ঘিরে ধরে তখন আপনজনেরাও কেমন পর হয়ে যায়, আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। খাবার আর অর্থ দিয়ে সহযোগিতা তো অনেক দূরের কথা কেউ খোঁজ নিতে পর্যন্ত আসেনি আমরা কেমন আছি.? ক্ষুধা আর দারিদ্রতা আমাকে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করিয়েছে ক্ষুধার যন্ত্রণা কাকে বলে। কোন উপায়ন্তর না দেখে বৃষ্টিকে মাথায় করে আমাদের থাকার জন্য একটা ভাঙা ছনের ঘর ছিল ঘরের পেছনে এবং পাশে কিছু নারকেল গাছ ছিল একের পর এক সে গাছে উঠছিলাম নারকেল পারবো বলে।
নারকেল গাছ থেকে কিছু নারকেল পেড়ে নামতেই হাত ফসকে গিয়ে গরগর করে আমি নিচে পড়ে গেলাম। অভ্যাস ছিল না পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল গাছে উঠতে মনোবল হারাইনি কারণ এই যুদ্ধে আমাকে জয়ী হতে হবে তাই। খালি গায়ে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রচন্ড পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমার বুকের ভেতরে এত বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যে কারণে বাইরের রক্ত দেখে বিচলিত হয়নি। ছুলে যাওয়া বুক বাড়ির কেউ যাতে দেখতে না পারে তাই গামছা দিয়ে বুকটা ঢেকে নারকেল গুলোকে মাথায় নিয়ে নীরবে কানাইপুর হাটের দিকে রওনা হলাম, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামছে আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় আকাশের মেঘের মতো করে আমার পেটের মধ্যেও গুড়ুম গুড়ুম করে ডাকছে! কে শুনবে এই ক্ষুধার বজ্রপাতের ডাক।
হাটে পৌঁছে নারকেল গুলো অল্পকিছু টাকায় বিক্রি করলাম যা দিয়ে এক বেলার চাল ডাল আর ছোট্ট দুটি ইলিশ মাছ যাকে আমরা বলি জাটকা ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরে আসলাম। বাড়ি.? বাড়ি বলতে ওই একটা ছনের ঘর, যেখানে আমরা সবাই মিলে থাকতাম, বৃষ্টি নামলেই সেই ঘরের একপাশে ঝর ঝর করে পানি পড়ত বাবা আবার সেই পানি আটকানোর জন্য কলা গাছের পাতা কেটে চালের উপর দিয়ে দিত, আর মা আমাদের সবাইকে নিয়ে ঘরের যে পাশে পানি পড়তো না ঐ পাশটাতে বসতেন।
বৃষ্টি থেমে গেলে মা রান্না করবে আর আমরা ভাবছি এবার অন্তত কিছু রান্না হবে এই ভেবে চোখে মুখে আনন্দ হাসির খেলা আর বুকের ভিতর অদেখা কান্নার জল। রান্না শেষ করে মা আমাদের খাবার দিল আমরা সবাই মিলে খেতে বসলাম, কয়েক দিন না খেয়ে থাকা অভুক্ত পেট খাবারের গন্ধে যেন অর্ধেক পেট ভরে গেল আমাদের। আর খাবারের স্বাদ.! বলে বোঝাতে পারব না তবে এতটুকু বলতে পারি ঈশ্বর যেন নিজে আমাদের জন্য খাবার পাঠিয়ে ছিল যার স্বাদ আজ অব্ধি আমি কোন খাবারে পাইনি।
আজও বৃষ্টি হলে আমার মন চায় সে খাবারের স্বাদ নিতে, বৃষ্টি হলে বাসাতে রান্না হয় বড় ইলিশ ভালো পরিবেশে খাবারের আয়োজন কিন্তু কোন কিছুতেই আমার মন ভরে না, সেই স্বাদ আর ফিরে পাই না। সেই দিনের সেই স্বাদ আমার রক্তের সাথে মিশে আছে, বৃষ্টি নামলেই সেই স্বাদের গন্ধ ভেবে আজও আমার চোখে জল আসে, বৃষ্টি আর বৃষ্টি ভেজা মেঘলা আকাশ জীবনের বন্ধু হয়ে আজও আমায় সব মনে করিয়ে দেয়, আমি কি আমার সেই দিন আর মেঘলা আকাশ ভুলে গেলাম নাকি??”
https://www.youtube.com/watch?v=uXgcBLkLmVo&t=251s
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post