মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার দুই মৌসুম চলছে। মেসিকে ছেড়ে দিলেও আবারও তাকে দলে ভেড়াতে চাচ্ছেন দলের কোচ জাভি। কিন্তু কেনই-বা মেসিকে ছেড়ে দিয়েছিল, তার আসল কারণ হয়তো অনেকেই জানেন না। বিষয়টা অনেক সহজ মনে হলেও আসলে অনেক জটিল ছিল মেসিকে ধরে রাখা। তাই মেসিকে নিয়মের দোহাই দিয়ে বার্সেলোনা থেকে বিদায় করে দেন সভাপতি লাপোর্তে।
ঘটনার দুই বছর পর স্প্যানিশ পত্রিকা ‘এল মুন্দো’ প্রকাশ করেছে চুক্তি নবায়নে বার্সেলোনাকে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। যদিও সেই ৯ শর্তের ছয়টি মেনে নিয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু বাকি তিন শর্তের দুটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও একটি প্রস্তাব মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করে মেসি ও তার পরিবার। আপত্তি ছিল ওখানেই। আর সে কারণেই বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ ২১ বছরের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটায় আর্জেন্টাইন জাদুকর।
২০২০ সালে চুক্তি নবায়নের জন্য মেসি যে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি ও তার আইনজীবী জর্জ পেকোর্ট, বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তামেউ ও বার্সা সিইও স্কার গ্রাউয়ের মধ্যকার মেইল চালাচালির সূত্রে।
২০২০ সালে বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট মেসির বাবাকে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাবপত্র পাঠান। প্রস্তাব ছিল এমন, চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর। এরপর প্রতিবছরই এটা বাড়তে থাকবে যদি-না ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মেসি চলে যাওয়ার জন্য বলেন। তবে সেই চুক্তির বিপরীতে মেসির আইনজীবী জর্জ পেকোর্ট চুক্তি নবায়নের নিজেদের শর্ত দিয়ে বার্সেলোনার প্রেসিডেন্টকে একটি মেইল করে। সেখানে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ৯টি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়। শর্তগুলো হচ্ছে:
১. নতুন চুক্তি হবে ৩ বছরের।
২. কর্তিত বেতন সুদসহ ফেরত: কোভিড ১৯-এর কারণে ২০২০-২১ মৌসুমে ২০ শতাংশ বেতন কমানো হয়েছিল মেসিসহ সব ফুটবলারের। মেসির দাবি, এর পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ২০২১-২২ মৌসুমে ১০ শতাংশ, ২০২২-২৩ মৌসুমে বাকি ১০ শতাংশ। শুধু বেতনের কেটে নেয়া অংশই নয়, এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদও দিতে হবে।
৩. নিজের ও সুয়ারেজের পরিবারের জন্য ক্যাম্প ন্যুতে প্রাইভেট বক্স।
৪. ক্রিসমাসের ছুটিতে পুরো পরিবার নিয়ে আর্জেন্টিনায় যাতায়াতের জন্য দিতে হবে প্রাইভেট বিমান।
৫. চুক্তি নবায়নের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো বোনাস প্রদান করতে হবে।
৬. রিলিজ ক্লজের ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা: ২০১৭ সালে করা সবশেষ চুক্তি অনুযায়ী মেসির রিলিজ ক্লজ ছিল ৭০ কোটি ইউরোর কাছাকাছি। নতুন চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ একেবারে কমিয়ে আনার শর্ত দেন তিনি। ‘কমিয়ে আনা’ বলতে প্রায় বিলুপ্ত করে দেয়া। ৭০ কোটি ইউরো থেকে মাত্র ১০ হাজার ইউরো। অর্থাৎ, চুক্তি থাকাবস্থায় কোনো ক্লাব চাইলে যেন বার্সাকে ১০ হাজার ইউরো দিয়েই নিয়ে যেতে পারে।
৭. বেতন বৃদ্ধি: স্পেন সরকার করের হার বাড়ানোয় বেতন বাবদ আয় কমে যাচ্ছিল মেসির। এ জন্য তিনি বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন, যাতে কর-পরবর্তী আয় আগের চেয়ে কম না হয়।
৮. ব্যক্তিগত সহকারীর চুক্তি নবায়ন: বার্সেলোনায় মেসির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন পেপে কস্তা। বার্সেলোনা যার বেতন পে-রোলে প্রদান করত। ক্লাবের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তার কাজ বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনা বোর্ডের। মেসি শর্ত দেন কস্তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে হবে।
৯. ভাইয়ের জন্য কমিশন: মেসির ভাই রদ্রিগো বার্সেলোনার সঙ্গে কাজ করতেন ফুটবলারদের এজেন্ট হিসেবে। ওই সময় আনসু ফাতির এজেন্ট ছিলেন তিনি। মেসির শর্ত ছিল তার ভাইয়ের সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন করতে হবে।
এই শর্তগুলোর মধ্যে রিলিজ ক্লজ কমানো এবং চুক্তি নবায়ন বাবদ এক কোটি ইউরো বোনাসের শর্ত মানতে রাজি হননি বার্সা প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, ক্লাবের আয় ১১০ কোটি ইউরো পার হওয়ার পরই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। এই শর্তের যথেষ্ট কারণও আছে। তখন বার্সেলোনা আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বার্সেলোনার পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবটি পছন্দ হয়নি মেসি ও তার পরিবারের। শেষ পর্যন্ত বার্সায় আর থাকতে চাননি মেসি ও তার পরিবার। যার ফলে ওই বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে ক্লাবের কাছে বুরোফ্যাক্স পাঠান মেসি, যেখানে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post