জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে বিশ্বজুড়ে। আবহাওয়া উষ্ণায়নের পৃথিবীতে কমে কমে যেতে শুরু করেছে পানি। পৃথিবীর বয়স যত বাড়ছে, কেয়ামত ততই নিকটবর্তী হচ্ছে। কেয়ামতের আলামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠান্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে করে মাঠঘাট যেমন ফসলহীন হয়ে পড়বে; প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘটবে এর উল্টোটা। বন্যার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হবে আরব অঞ্চল। পানির ছোঁয়ায় শুষ্ক মরুভূমি হয়ে যাবে সবুজ অরণ্যে। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসের মাধ্যমে কেয়ামতের অনেক নিদর্শনের কথা বর্ণনা করে গেছেন। তারমধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে বা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।
ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতি বৃষ্টি এবং বন্যায় চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে ইসলামি গবেষকদের মনে। চলতি বছর ওমান, পাকিস্তান, দুবাই সহ মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় দেশগুলোতে যে পরিমাণ বন্যা হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল। এদিকে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভারতের বিহার রাজ্যেও। শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে ১৯৭৯ সালে নির্মিত একটি বাঁধে আটকে রাখা পানি। আর এতে দেখা মিলেছে ১২০ বছরের পুরনো ছোট্ট একটি মসজিদের। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পানির নিচে থাকলেও তাতে মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
সিয়াসত ডেইলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হঠাৎ দৃশ্যমান মসজিদটি নিয়ে উৎসুক সবাই। অনেকেই মসজিদটির কাছে গিয়ে ছবি তুলছেন। ভেতরে প্রবেশ করছেন কেউ কেউ। এতকাল পরেও মসজিদটির কাঠামো অবিকৃত থাকায় আশ্চর্য হচ্ছেন তারা। নির্মাণের কোনোরকম ক্ষতিই হয়নি। তিন গম্বুজওয়ালা মসজিদটি যেন আল্লাহর একত্ববাদ ও সর্বশক্তিমান ক্ষমতার ঐশী ঘোষণা দিচ্ছে। এই মসজিদকে ঐতিহাসিক মসজিদ বললে ভুল হবে না। কারণ যখন এটি ত্রিশ বছর আগে দৃশ্যমান ছিল, তখনকার অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তবে বৃদ্ধ যারা বেঁচে আছেন, তারা জানাচ্ছেন, এই মসজিদটির নাম ছিল নূরী মসজিদ।
১৯৮৫ সালে ফুলওয়ারিয়া ড্যাম নির্মাণের সময় এটির সলিলসমাধি ঘটেছিল। প্রথমে পানির স্তর কমতে থাকলে গম্বুজের চেহারা দৃশ্যমান হতে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে কেউই বুঝতে পারেননি। সবার মধ্যে কৌতূহল জাগতে থাকে। এরপর পানি শুকিয়ে পুরো মসজিদ সামনে আসতেই চমকে ওঠেন সবাই। এক রাতের মধ্যে জ্বীনে বানালো নাকি! কিন্তু, ইতিহাস সামনে আসতেই পরিষ্কার হয় পুরো ব্যাপারটি। মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। প্রাচীন মুঘল রীতিতে এটি নির্মিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ফুলওয়ারিয়া ড্যাম নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। এখানে ছিল মুসলিমদের বেশ ভালোরকম বসবাস। তারা নিয়মিত নামায আদায় করতেন সেখানে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের জন্য তাদেরকে এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হয়। সরকার জায়গাটি অধিগ্রহণ করে। রাজাউলি ব্লকের অন্য আরেকটি গ্রাম হারদিয়াতে তাদের স্থানান্তর করা হয়।
তবে বাঁধ নির্মাণের সময় সময় মসজিদটির কোনও ক্ষতি করা হয়নি। সেই মসজিদ এখনও অক্ষত। বয়স্ক মুরুব্বিরা বলছেন, এই মসজিদটি বিংশ শতকের প্রথমদিকে নির্মিত হয়। এখন এর বয়স প্রায় ১২০ বছর। মসজিদ নির্মাণের মুঘল রীতি অনুসরণ করা হয়েছে এতে। সেটা দেখেই বয়স অনুমান করা সহজসাধ্য হয়েছে অনেকের কাছে। তবে এমন ঐতিহাসিক মসজিদটিকে কেউ মন্দির বলে দাবি করে কি না, তাও ভাববার বিষয়। তাছাড়া পানি যদি ফের বাড়ে, তবে মসজিদের ফের সলিলসমাধি হবে। আবার মানবচক্ষুর অন্তরালে চলে যাবে ইতিহাসের এক জীবন্ত মসজিদ।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর প্রভাব দেখা মিলছে ব্যাপক আকারে। আরব দ্বীপগুলোতেই হচ্ছে ঝড়বৃষ্টি, তীব্র বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তুষারপাত। পানির ছোঁয়ায় বলতে গেলে শুষ্ক মরুভূমি ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে সবুজ অরণ্যে। কেয়ামত হয়তো সন্নিকটে তাই আরবের আবহাওয়ার এতো পরিবর্তন। বলছিলেন কামরাঙ্গীরচর খাদিমুল ইসলাম মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি মাহমুদুল হক জালীস। তিনি বলেন, এসবের মাধ্যমে আরবের মরুভূমি উর্বর হবে, চাষাবাদের উপযুক্ত হয়ে উঠবে, গাছপালায় ভরে যাবে। এসবের মাধ্যমেই হয়তো আমরা কেয়ামতের আরও নিকটে চলে যাচ্ছি। এসবের কথা হাদিসে নবীজি আমাদের বলে গেছেন।
রাসুল (সা.) যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আমরা তার মধ্য দিয়েই পার হচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আলেমরা। তাদের মতে, মরু অঞ্চলের ঝড়বৃষ্টি, বন্যা, সবুজায়ন প্রকল্প কিংবা সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের প্রকাশ করা সময় ছোট হয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে তার সবকিছুই কেয়ামতের আলামত। এ সব কিছুর কথাই আমাদের নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই বলে গিয়েছিলেন, যা এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post