উন্নয়নের পথে র্দূবার এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এটা এখন আর স্বপ্ন কিংবা কল্পনা নয়, বাস্তবতা। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় অর্থনীতিকে সর্বাধিক সহায়তা করছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স। দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার লাইফলাইন হলো রেমিট্যান্স। সরকার নানা উদ্যোগ এবং প্রণোদনা দিচ্ছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে এবং বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে। কিন্তু প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ সাময়িক বাড়লেও হুন্ডি রেট প্রণোদনার চেয়ে বেশি। তাই এখনো প্রচুর রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। হুন্ডিতে লেনদেন না করতে এবং হুন্ডির বাজে প্রভাব নিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আমরা ক্লান্ত। অনেকবার চিহ্নিত হুন্ডি কারবারিদের হুমকিও পেয়েছি কাউন্টারে হুন্ডির টাকা জমা না নেওয়ায়।
একজন ব্যাংকার হিসেবে রেমিট্যান্স ডেস্কে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে প্রবাসী বা রেমিটারদের কিছু মনের কথা জানতে পেরেছি। সরকার প্রণোদনা আরও দিলেও তেমন কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে আরও বেশি লাভ দেবে, সুযোগ দেবে। আমরা মানুষমাত্রই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভিতু। যদি রেমিটারদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সরকার দিতে পারে, তাহলে হুন্ডি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন আমরা যারা সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি, তাদের বেতন-ভাতা প্রাইভেট ব্যাংকারদের চেয়ে অনেক কম। তারপরও সরকারি চাকরির জন্য এত লাইন কেন! কারণ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা। পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সামাজিক মর্যাদা—এই সবের জন্য আমরা প্রাইভেট ব্যাংকের তুলনায় বর্তমান লাভটা ছাড় দিচ্ছি ভবিষ্যতের জন্য।
ঠিক তেমনি সরকার যদি রেমিটারদের প্রেরিত অর্থের ওপর ভিত্তি করে পেনশন ভাতা/বিশেষ ভাতা চালু করে, তাহলে একজন রেমিটার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হুন্ডি লেনদেন করবেন না। যেমন: সরকার যদি একটা কাঠামো দিয়ে দেয় যে একজন রেমিটার যত বেশি রেমিট্যান্স বৈধ পথে দেশে পাঠাবেন, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে তিনি দেশে চলে এলে তত বেশি পেনশন ভাতা পাবেন। কত বছর পর্যন্ত সেই রেমিট্যান্স আসতে হবে, পরিমাণ কী হবে এসবের শর্ত ঠিক করা যেতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ সমন্বয়ে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করা যায়।
আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের চাওয়া খুব বেশি নয়; দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই আজ তাঁরা পরবাসী। নিজের প্রিয় পরিবার–পরিজন, স্ত্রী, সন্তান থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও নিদারুণ পরিশ্রম করে কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠান তাঁরা। তাঁরা চান একটু সম্মান। এয়ারপোর্টে তাঁদের কেউ হাসিমুখে বরণ করুক, ভালো আচরণ দিয়ে তাঁদের কেউ ঝামেলামুক্ত আগমন-প্রস্থানে সাহায্য করুক। নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে কিংবা ঋণের অভিশাপ মাথায় নিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেক সময় তাঁরা আশানুরূপ কর্ম পান না; অমানবিক কষ্ট আর পরিশ্রম করে অর্থ পাঠান প্রিয় দেশে।
ভিনদেশে অনেক সমস্যায় পড়লেও আমাদের দেশের দূতাবাসগুলো থেকে তেমন সাহায্যও পান না। অনেক প্রবাসী ভাই ধরা পড়ে দেশে চলে এলে তাঁর ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। তিনি স্ত্রী–সন্তানের চোখের দিকে তাকাতে পারেন না, পাওনাদারের ভয়ে বাইরে যেতে পারেন না, মান–সম্মানের ভয়ে রিকশাও চালাতে পারেন না! এই অবস্থা কিন্তু আমাদের অর্থব্যবস্থার জন্যই। রাষ্ট্র তাঁকে তাঁর অর্থ রোজগারের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। কোনো প্রবাসী দেশে চলে এসে নিজের কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে তাঁকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সরকারের উচিত তাঁরা দেশে চলে এলে তাঁদের জন্য জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণের নিশ্চয়তা দেওয়া। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
দেশের স্বার্থে সরকার কত ধরনের ভাতা ও পেনশন দিয়ে থাকে। আমার দেশের অর্থনীতির প্রাণ প্রবাসীদের জন্য ভবিষ্যৎ পেনশন/বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করলে ওনারা সম্মানিত হবেন, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পাবেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে, হুন্ডি বন্ধ হবে, বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রচুর বাড়বে। কারণ, অনেক প্রবাসী ২০-৩০ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে এসেও দেশে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকুই পান না। নিজের সর্বস্ব দেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশে এসে পকেটখরচের অর্থটাও পান না। পরিবারকে সব দিয়ে নিজে নিঃস্ব হন। তাই তাঁদের সম্মান বাড়লে এবং দেশে এসে মর্যাদার নিশ্চয়তা পেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ যেমন বাড়বে, তেমনি দেশটাও এগিয়ে যাবে। দেশটা এগিয়ে যাক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মো. শরীফুল ইসলাম সিনিয়র অফিসার, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, নিমসার শাখা, কুমিল্লা।
আরো পড়ুন:
ছুটিতে দেশে এসে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু
বেড়েছে প্রবাসী আয়, রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার
হুন্ডিতে টাকা নিলে বিপদে পড়বেন প্রবাসীর স্বজন
মৃত্যুকূপ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছে ৩৮ বাংলাদেশি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post