হ্যাকারদের প্রধান টার্গেট এখন প্রবাসী। প্রবাসীদের বড় বড় কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ টার্গেট করে এরপর প্রতারণার জাল ফেলেন হ্যাকাররা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে কথিত হ্যাকার গ্রুপগুলো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ‘মাত্র ৫ মিনিটে যেকোনো ফেসবুক আইডি হ্যাক করে দেব’। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘কাজ হওয়ার পর টাকা বিকাশে গ্রহণ করা হবে’।
এমন বিজ্ঞাপন দেখে প্রবাসীরা স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ বা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এসব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যোগাযোগের পর কথিত হ্যাকার গ্রুপগুলো প্রবাসীদের এমনভাবে বিশ্বাস অর্জন করে যেন তারা পাঁচ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে দেবে। বিশ্বাস অর্জনের পর তারা কয়েক ধাপে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে। টাকা নেওয়ার পর অধিকাংশ সময় নম্বর কিংবা ফেসবুক আইডি ব্লক করে দেয় তারা। যাতে কথিত হ্যাকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন ভুক্তভোগীরা।
মূলত এসব হ্যাকার গ্রুপের প্রধান টার্গেট বিবাহিত প্রবাসীরা। দেশে স্ত্রী রেখে তারা বছরে পর বছর প্রবাসে জীবন কাটাচ্ছেন। সন্দেহ ও প্রতিশোধপরায়ণতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রিয় মানুষদের ফেসবুক অথবা ইমো আইডি হ্যাক করাতে এসব গ্রুপের শরণাপন্ন হচ্ছেন প্রবাসীরা। এ সুযোগে প্রবাসীদের বোকা বানিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতারক সাইবার অপরাধীরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হলো, প্রবাসীদের ফিশিং লিংক (প্রতারণার মাধ্যমে কারও কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া) পাঠিয়ে হ্যাকার গ্রুপগুলো তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। পরে উল্টো প্রবাসীদের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
সম্প্রতি এমন এক সাইবার অপরাধী গ্রুপের খপ্পরে পড়ে অর্ধলাখ টাকা খুইয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. সুমন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে এসে নিজ জেলার এক তরুণীকে বিয়ে করেন। তিন মাস সংসার করে মে মাসে আবারও জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমান সুমন। এরপর প্রায় দিনই স্ত্রীকে ফোনে ওয়েটিং (ব্যস্ত) পান তিনি। পরিবারও জানায়, তার স্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সুমনের মনে সন্দেহ জাগে, হয়তো শান্তা তার অবর্তমানে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সন্দেহ যাচাই করতে সুমন ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া ‘হ্যাকিং বিডি’ নামের কথিত একটি ফেসবুক হ্যাকিং গ্রুপের অ্যাডমিনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, মেসেজে আমার এবং আমার স্ত্রীর কিছু স্পর্শকাতর ছবি যা আমরা মেসেঞ্জারে আদান-প্রদান করেছিলাম। ইমোতে হ্যাকিং বিডির অ্যাডমিন আমাকে জানায়, সে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে। এক লাখ টাকা না দিলে এসব ছবি সে ছড়িয়ে দেবে। পরে টানা কয়েকদিন অ্যাডমিনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে ফেসবুক আইডি নিজের নিয়ন্ত্রণে পাই। স্ত্রীর আইডি হ্যাক করাতে গিয়ে তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছি, এ কারণে কাউকে কিছু বলিনি
শুধু সুমন নয়, তার মতো অনেক প্রবাসী কথিত এসব হ্যাকার গ্রুপের শরণাপন্ন হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন। কেউ ফেসবুকের আইডি উদ্ধারের জন্য, আবার কেউ ফেসবুক আইডি হ্যাক করানোর জন্য এসব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারিত হয়েছেন। কোনো প্রবাসী তার স্ত্রী বা বান্ধবীর ওপর নজরদারির জন্য আইডি হ্যাক করতে এসব গ্রুপের শরণাপন্ন হন। আবার স্ত্রী বা বান্ধবীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, প্রতিশোধ নিতেও অনেকে আইডি হ্যাকের চেষ্টা করেন। তখন তারা অনলাইনে এ জাতীয় গ্রুপগুলো খুঁজতে থাকেন। যারা টাকার বিনিময়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে দেবেন। পরবর্তীতে টাকা-পয়সার নেওয়ার পর তারা আর ফোন ধরেন না। যারা ফেসবুক আইডি হ্যাক করার মানসিকতা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন তাদেরকেও সাইবার অপরাধী বললেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
আরো পড়ুন:
ছুটিতে দেশে এসে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু
বেড়েছে প্রবাসী আয়, রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার
হুন্ডিতে টাকা নিলে বিপদে পড়বেন প্রবাসীর স্বজন
মৃত্যুকূপ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছে ৩৮ বাংলাদেশি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post