পারস্য উপসাগরের এককোণায় চোখে পড়বে ছোট্ট একটা দেশ, যার আয়তন মাত্র ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের তুলনায় সামান্য বেশি। বাংলাদেশের তুলনায়ও প্রায় ১৩ গুণ ছোট এই দেশ। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে ৯০তম। বাংলাদেশের মতো কাতারও স্বাধীনতা লাভ করেছিলো ১৯৭১ সালে। স্বাধীন হওয়ার সময় তৎকালীন সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গরীব দেশগুলোর একটি ছিল কাতার। দেশটিতে গ্রীষ্মকালে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যায়। আয়তনের সিংহভাগ মরুভূমির দখলে থাকা কাতার তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী স্থান ছিলো।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, কাতার এখন গ্রহের সবচেয়ে ধনী দেশ! বিশ্বের অন্যতম এই ছোট দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ১,২০,০০০ ডলার, যেটি কিনা ফ্রান্সের চেয়েও তিনগুণ বেশি! মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ধনী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। কাতারও এর ব্যতিক্রম নয়, মরুভূমির বালির নিচে লুকিয়ে থাকা বিশাল জ্বালানি ভান্ডারই কাতারের অর্থের যোগানদাতা। তবে, কাতারের শুধু তেলই নয়, আরো একটি সম্পদ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, আর তা হলো প্রাকৃতিক গ্যাস।
১৯৪০ এর দশকে কাতারে সর্বপ্রথম তেলের খনি আবিষ্কার হয়, কিন্তু ১৯৬০ এর দশকেই তা প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। গরীব কাতারের ভাগ্যেরও সামান্য পরিবর্তন ঘটেছিল, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। সত্তরের দশকে শেল কোম্পানি দেশটির সবচেয়ে বড় সম্পদ আবিষ্কার করে: ‘দ্য নর্থ ফিল্ড’, বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র! কিন্তু তখন প্রাকৃতিক গ্যাস খুব একটা লাভজনক ব্যবসা নয়। তখনকার দিনে গ্যাস শুধুমাত্র পাইপের মধ্যেই সরবরাহ করা সম্ভব ছিল, আর মধ্যপ্রাচ্যের কোণায় পড়ে থাকা কাতার তখন শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক দূরে ছিলো। তাই শেল কোম্পানিও এদিকে আগ্রহ দেখায়নি। তবে, বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো দেশ ১ টন LNG উৎপাদন করতে যা খরচ করে, কাতার সেই পরিমাণ খরচ করেই কম করে হলেও ৪ টন জ্বালানি উৎপাদন করে।
কাতারের এ উন্নতির পেছনে বড় ভুমিকা রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। দেশটিতে প্রায় তিন লাখের বেশী বাংলাদেশী বসবাস করছেন। নির্মাণ খাত থেকে শুরু করে সব খাতেই রয়েছে বাংলাদেশীদের অবদান। ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর বসতে যাচ্ছে কাতারে। এর মাধ্যমে দুই দশক পর আবারও এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিত হবে ফিফা বিশ্বকাপ। ২০২২ সালে আয়োজিত হলেও স্বাগতিক কাতারে এর প্রস্তুতি চলছে আরও অনেক আগে থেকেই। প্রথমবারের মতো আয়োজক হওয়ার সুযোগ পেয়ে আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য কাতারের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলের তারকা আর মহারথীদের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে আরব দেশটি। আর তাদের পাদচারণার অপেক্ষায় রয়েছে কাতারের নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলো।
আরো পড়ুন:
ব্ল্যাক আউট ওমান, চরম দুর্ভোগে মানুষ
অর্থবছরের শুরুতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে প্রবাসী আয়
কুয়েতে নতুন নির্দেশনা অমান্য করলে গুনতে হবে জরিমানা
বিমানবন্দরে আর ট্রলির সমস্যা হবে না, জানালেন বিমান প্রতিমন্ত্রী
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post