দেশে চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে ১৭২ কোটি ৯৩ লাখ বা ১.৭৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে) প্রায় ১৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। রোববার (২৮শে আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয় দাঁড়াবে ২শ’ ১৪ কোটি ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের রেট ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি ব্যবধান থাকে। তখন বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। এখন এক ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংক ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা দিচ্ছে। সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। সব মিলিয়ে ১০০ টাকার মতো পাওয়া যায়। কিন্তু খোলা বাজারে ডলার ১১০ থেকে ১১১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মানে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স এলে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম। যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ব্যবধান কমানো যায় তাহলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি আসবে। তাই যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারের ডলারের রেটের ব্যবধান কমানোর পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, আগস্টের প্রথম ২৫ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে এসেছে ৬৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে এসেছে দুই কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ১১ কোটি ডলার, সিটি ব্যাংকে প্রায় ১১ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার।
আলোচিত এ সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।
এর আগে গত মাস জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। স্থানীয় মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
জুলাইয়ে তার আগের মাস জুনের চেয়ে প্রায় ২৬ কোটি ডলার বেশি এসেছে। জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। তার আগের মাস মে-তে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ের তুলনায় আগের বছরের জুলাইয়ে ২২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিক কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর।
তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা পর্যন্ত, নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকা, আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা।
সবশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন হাজার ৯৩৬ কোটি (৩৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুত এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আরো পড়ুন:
ওমানে ক্রেন দুর্ঘটনায় এক প্রবাসীর মৃত্যু
সৌদিতে প্রাইভেটকার খাদে পড়ে ৩ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু
মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করায় শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে কাতার
মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সাবেক ইমামের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল সৌদি!
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post