মহামারী করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসলে বাধে বিপত্তি, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন রাখতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তার সঙ্গে আনা চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী কর দিতে হবে বলে আটকে দেওয়া হয়। আজ সোমবার ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা জানান ডা. ফেরদৌস খন্দকার।
তিনি বলেন, ‘বেশকিছু প্রায় আটটি স্যুটকেস নিয়ে এসেছিলাম, সেটায় মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ইত্যাদি সামগ্রী হটলাইনের যোদ্ধা, ডাক্তার, নার্সদের দেবো বলে। এয়ারপোর্টে আটকে দিলো, এগুলোর নাকি ট্যাক্স দিতে হবে এ রকম করোনা ক্রান্তিকালে। রেখেই দিলো, সাথে আনতে পারিনি।’
ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘আপনাদের কেউ যদি থাকেন, ছাড়াতে পারবেন, ছাড়িয়ে নিয়ে যান। হটলাইনের যে কাউকে দিতে পারেন, আমার কোনো দাবি নাই। আমি এসেছি আপনাদের পাশে আমার কাজটুকু আমি করেছি।’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়িয়ে যেকোনো হাসপাতালে দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘উপর থেকে আশা করি, আপনাদের মধ্যে কেউ যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন, এই বাকি কাজটুকু করবেন। যেকোনো একটি হাসপাতালে দিয়ে দেবেন, যেকোনো একটি হাসপাতালে, আপনাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ।’
ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে বঙ্গবন্ধুর হত্যার কুশীলব খন্দকার মোস্তাক ও বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদের আত্মীয় হিসেবে যে প্রচারণা চলছে তার ব্যাখ্যা দিতে ফেসবুক লাইফে নিজের পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ডও তুলে ধরেন তিনি। দেশের মানুষের উপকার করতে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রবিবার (৭-জুন) বাংলাদেশে আসেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার। কিন্তু বাংলাদেশে আসার আগেই তার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে নানা তথ্য ছড়ানো হয়েছেন। যা নিয়ে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন। একাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের নানা অভিব্যক্তিও প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা ১১২ বাংলাদেশিকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের যে বিশেষ বিমান বাংলাদেশে আসে, সেই ফ্লাইটে তিনি দেশে আসেন। এর পর তাকে নিয়মানুযায়ী ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার চিকিৎসা দিয়ে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। ফলে প্রবাসীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই বাংলাদেশে আসা তার।
কিন্তু বাংলাদেশের উদ্দেশে তিনি উড়াল দেওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন এবং তারেক রহমানের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। আবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খন্দকারের মোশতাকের ভাগনে তিনি। টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগে পদ ভাগাতে চেয়েছেন। এ ছাড়া আরো কিছু কথা তার নামে ছড়িয়ে পড়েছে।
অবশ্য বাংলাদেশে পৌঁছার পর এসবের জবাবও দিয়েছেন তিনি। নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে একাধিক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। সেখানে তিনি এসব তথ্যকে মিথ্যা অভিহিত করে তা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, যদি মনে করেন আমার সেবা আপনাদের দরকার, তাহলে পাশে থাকুন। আর যদি মনে করেন আমার দরকার নেই তাহলে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাব।
অপর একটি স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, দেশে আসার জন্য যখন এয়ারক্রফটে চড়ে বসি তখনও ভাবিনি, আমার জন্য এতো লজ্জাজনক তিক্ত অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। যা দেশের মানুষের কাছ থেকে আমার প্রাপ্য ছিল না।
তিনি বলেন, আমি দেশের মন্ত্রী-এমপি কিংবা উচ্চপদে আসীন হতে চাইনি। কোভিড-১৯ নিয়ে গত তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে যে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি। দেশের মানুষের কোনো কাজে নিজেকে লাগানো যায় কি না সে জন্যই মূলত আসা। কারণ আমার জন্ম বাংলাদেশে। এই দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমি ডাক্তার হয়েছি। তাই দায়িত্ববোধ থেকেই বার বার দেশে আসি।
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, প্লেন থেকে নেমেই জানলাম, আমাকে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা উপাধি দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে খুনি রশিদের খালাতো ভাই বানানো হয়েছে। আবার আমি নাকি পলাতক তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পয়সা দেই। আমি আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যে, এসব নিয়ে কী বলব।
তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ি কুমিল্লা এবং নামের সঙ্গে খন্দকার আছে। এ জন্য হয় তো মোস্তাক ও রশিদ গংদের আত্মীয় উপাধি দেয়া হয়েছে। আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গোলাম আযমের আত্মীয় বানানো হতো। আবার গোপালগঞ্জে হয়তো মুফতি হান্নানের আত্মীয় বলা হতো। আমি জানি না, এইসব অপবাদ যারা দিচ্ছেন তাদের আমি কী ক্ষতি করেছি।
ডা. ফেরদৌস বলেন, আমি যা নই তাই বানানো হচ্ছে। অথচ আমি যা ছিলাম তা কেন আপনারা বলছেন না? ১৯৯১ সালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে শিবির ও ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়েছি। শিবিরের মার খেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছি এবং শিবিরের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতও করেছি। আপনারা চাইলে খুব সহজই এসব তথ্য নিতে পারেন। ওই সময় এসব সমালোচক কোথায় ছিলেন, তা আমার জানা নেই।
আরও পড়ুনঃ যে শর্তে খুলে দেওয়া হলো ওমানের সেন্ট্রাল সবজি মার্কেট
তিনি বলেন, বেশি কথা না বলে চ্যালেঞ্জ দিলাম। আমার সম্পর্কে দেওয়া অপবাদের একটিও যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে যে শাস্তি হয় তা মাথা পেতে নেব। এসব অপবাদ যারা দিচ্ছেন তাদের প্রতি কোনো অনুরোধও নেই, অভিযোগও নেই। তবে এতটুকু বলব যে, যারা এসব কাজ করছেন তারা নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। আমার সম্মানহানি করার এই অপচেষ্টার জন্য হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে। নিয়তি কাউকেই ছাড়বে না। তার বিচার অনেক কঠিন।
ফেসবুক স্ট্যাটাস:
আরও দেখুনঃ প্রবাসীদের আলাদা স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post