ওমানে বহুল প্রত্যাশিত অনাপত্তি ছাড়পত্র (এনওসি) প্রথা বাতিল করাকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির মালিক ও কর্মচারীরা। আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে এই প্রথা বাতিল হবে। এখন থেকে দেশটিতে কোনো প্রবাসী কর্মী কোনো কাজের চুক্তি বা সমাপ্তির প্রমাণ সরবরাহ করতে পারলে সে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করতে পারবেন।
ওমানের ন্যাশনাল গ্যাস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নলিন চন্দনা বলেছেন, ওমানে প্রবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে দক্ষ কর্মীদের উপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমি মনে করি যে, অতীতে দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়ে এসেছিলো তাদের ব্যবসায়। সেখানে তাদের প্রচুর টাকা খরচ হয়। এছাড়াও দেশ ভিত্তিক প্রবাসী কর্মী পাওয়া অনেক কঠিন ছিলো। কারণ তাদের একটি এনওসি দরকার হতো যা আগে পাওয়া কষ্টকর ছিলো। কিন্তু বর্তমান এনওসি বাতিল হওয়ায় এই ক্ষেত্রটিতে আরও উন্নত হবে। যারা ওমানে অনেকদিন ধরে বসবাস করছে এবং যাদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের দেশে আরও কাজে লাগানো উচিত। দেশের বাহির থেকে বেশি কর্মী নিয়োগ না দিয়ে দেশের কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া বেশি জরুরী।”
প্রত্যাশিত অনাপত্তি ছাড়পত্র (এনওসি) বাতিল হওয়ায় দেশের শ্রমিকদের অন্য কোথাও কাজের সহায়তা করবে। এনওসি-র রায় প্রত্যাহার হওয়ার পরে তাদের অন্য কোথাও উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। নলিন চন্দনা বলেন, “যদি আপনি একটি কোম্পানির পরিষেবাগুলিতে সন্তুষ্টি না হন এখন থেকে আপনি সেই কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারবেন। এইভাবে, নতুন কোম্পানিতে আপনি নিজের দক্ষতাকে অনেক ভালো ভাবে দেখাতে পারবেন। আপনি নিজের ক্যারিয়ারেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
অটোমোবাইলে কর্মরত ওয়াহিদ খান বলেন, “ওমানে আমার অন্য প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে কাজ করার প্রস্তাব ছিলো, কিন্তু আমি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম সেই প্রতিষ্ঠানে কোনো এনওসি ছিলো না, যে কারণে আমি কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে পারি নাই। আমি তাদের অনুরোধ করে ছিলাম আমাকে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এনওসি না থাকায় তারা আমার অনুরোধ গ্রহণ করে নি। আমি আশাবাদী এনওসি প্রথা বাতিল হওয়ায় দেশটির জন্য একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। এখন থেকে যে কেউ ভালো কোনো প্রস্তাব পেলে প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে পারবে। যেখানে তাদের ক্যারিয়ার অনেক দ্রুত উন্নতি লাভ করবে।”
ওমানে কর্মরত ওমানি নাগরিক মোতাসসিম আল হাশমি বলেন যে, এক চাকরি থেকে পরের চাকরিতে যেতে এখন আর কোনো সমস্যা থাকলো না। এতে নতুন সহকর্মী পাবে ও নিজেদের কাজের অগ্রগতি বাড়বে। আমরা বর্তমানে জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছি। সুতরাং আমাদের বহুমুখী ও দক্ষ শ্রমিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে কিছু ব্যবসায়ী মালিক অনাপত্তি প্রশংসাপত্র অপসারণের বিরুদ্ধে ছিলেন। আল ওয়েফাক রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক মাজন আল তাওকি টাইমস অফ ওমানের সাথে কথা বলার সময় বলেন যে, তিনি এনওসি’র বিধি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধী। ওমানে এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। চলমান করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন, এখানকার বাজারগুলির অনেকটাই ভঙ্গুর। আমাদের যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার আলোকে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের বেতন দিতে হবে। আমরা কয়েক মাস ধরে প্রবাসী কর্মীদের বেতন পরিশোধ করছি। কিন্তু এখন যদি সে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে চলে যায় তবে আমারা বিপদে পরবো। নিয়োগকর্তারা যিনি বিদেশ থেকে এই কর্মচারীকে নিয়ে আসেন। তিনি তাকে প্রশিক্ষণ দেন, বছরের পর বছর কাজ শেখান, যখন তিনি অভিজ্ঞ হয়ে যান তখন সেই ব্যক্তি চলে গেলে সেই নিয়োগকর্তা বিপদে পরে যায়। তার এতদিনের পরিশ্রম বিফলে চলে যায়। তাই এই সিদ্ধান্ত খুব একটি ভালো না দেশের জন্য।”
আরও পড়ুনঃ ওমানে নিষিদ্ধ হলো প্রবাসীদের জমির মালিকানা
একইভাবে ওমানে বসবাসরত কয়েকজন শীর্ষ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী প্রবাস টাইমকে বলেন, এই আইনে শ্রমিকরা লাভবান হলেও ক্ষতির সম্মুখীন হবে ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, দেশ থেকে একজন শ্রমিককে ওমানে এনে ভাষা শেখাতে হয়, তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া লাগে, বছরের পর বছর কাজ শেখান, যখন তিনি অভিজ্ঞ হয়ে যান তখন সেই ব্যক্তি চলে গেলে সেই নিয়োগকর্তা বিপদে পরে যায়। তার পিছনে কোম্পানির এতদিনের পরিশ্রম বিফলে চলে যায়।
আরও দেখুনঃ করোনা সঙ্কটেও ঈদের মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাসীদের
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post