জুয়া খেলতে ঋণ, এরপর পাওনাদারদের টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা কাকলী ও ছেলে তালাহকে নির্মম ভাবে হত্যা করে সাদিকুর। সম্প্রতি নারায়গঞ্জের আড়াইহাজারে মা ছেলেকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় পিবিআইএর হাতে গ্রেফতার হয়ে স্বীকাক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। পিবিআই বলছে, ঘরের স্বর্ণ ও টাকা নিতে বাধা দেয়ায় প্রথমে প্রবাসীর স্ত্রী ও পরে ছেলেকে বটি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয় যায় সাদি। গত ৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের এই ঘরেই ঘটে এমন নির্মম ঘটনা।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, রাজিয়া ও তার সন্তান তালহা সেমিপাকা ঘরে থাকতেন। তার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা যান। ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী সাদিকুর বাসার সামনে আসেন। ভাবি বলে ডাকতে থাকেন। রাজিয়া সাধারণত বাসায় ঢোকার কলাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখেন। বাসার ভেতর থাকলেও গেট তালাবদ্ধ রাখেন। তবে সেদিন রাতে গেট খুলে সাদিকুরকে ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে দেন।
পিবিআই প্রধান জানান, জোড়া খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বাড়ির পেছনে সুপারিগাছে মাটি দেখতে পাওয়া যায়। এই সুপারিগাছ ব্যবহার করে রাজিয়ার ঘরে প্রবেশ করা যায় না। তবে সুপারিগাছ ব্যবহার করে ওপরে উঠে ঘরের ভেতরের বাথরুমের কিছু অংশ দেখা যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজিয়ার ঘরের পেছনে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে স্থানীয় কিছু যুবক গেম খেলেন। তখন খোঁজ নিয়ে অজিদ কাজী নামের এক যুবককে সন্ধান মেলে। জিজ্ঞাসাবাদ অজিদ জানান, সেদিন রাতে ঘরে চিৎকার শুনে সুপারিগাছ ব্যবহার করে ওপরে উঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে সাদিকুরকে দেখতে পান। পরে ঘর থেকে দ্রুত বাইরে যেতে দেখেন। হত্যাকাণ্ডের পর সাদিকুর অজিদ কাজীকে হত্যার হুমকি দিয়ে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে বলেন।
এরপর গত ৯ জুলাই রাতে নারায়গঞ্জের নিজ বাসা থেকে সাদিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই সদস্যরা। একপর্যায়ে সাদি নিজেই ঘটনার বিস্তারিত জানান গোয়েন্দাদের। ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। পিবিআই প্রধান জানান, আইপিএল জুয়া খেলে প্রচুর টাকা দেনা হয়েছিলেন সাদি। সেই টাকা জোড়ারের জন্য হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত সাদিকুর রাজিয়ার কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চান। রাজিয়া তখন সাদিকুরকে বলেছিলেন, বাসায় কোনো টাকা নেই। একপর্যায়ে রাজিয়া আলমিরার তালা খুলে সাদিকুরকে দেখান, আছে মাত্র ১০০ টাকা। তখন সাদিকুর আলমিরার ভেতরে একটা বাটিতে রাখা স্বর্ণালংকার দেখতে পান। তখন চেয়ারে বসে থাকা রাজিয়ার হত্যার জন্য ওড়না দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পাশে থাকা ইস্তিরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে রাজিয়াকে জবাই করেন সাদিকুর। আর ছেলে তালহা এ ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও জবাই করে হত্যা করেন সাদিকুর। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, নিহত রাজিয়ার স্বামী একজন সৌদি প্রবাসী ছিলেন, তিনি কয়েক বছর আগে মারা যান।
আরো পড়ুন:
কাতারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসীর মৃত্যু
মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর
বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা মসজিদে হারাম
ওমান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু
ওমানে সেলফি তুলতে তুলতে মারা গেলেন দুই পর্যটক
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post