অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার ভারে যেন নুয়ে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের অভিযোগ উঠছে আকাশপথের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো নানা প্রতিকূলতার মধ্যে লাভজনকভাবে টিকে থাকলেও সরকারি নানা সুবিধা নিয়েও লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না বাংলাদেশ বিমান।
পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয় আর একের পর এক দুর্ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি ও গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনাতো রয়েছেই। বিপুল সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি ডুবতে বসেছে দুর্নীতি-অনিয়মের ভারে। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিমানের সার্বিক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে, বিমানবন্দরের বহির্গমন ও আগমনী এলাকার অনিয়ম ছাড়াও আরো ২৮ খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
বহির্গমন টিকিট বুকিং ও বিক্রয় কাউন্টারে যাত্রী হয়রানি, চেকইন কাউন্টারে অব্যবস্থাপনা, ব্যাগেজ বিলম্বিত হওয়া, যাত্রী ওঠানামা সংক্রান্ত বিড়ম্বনা, ট্রাফিক হেলপার কর্তৃক যাত্রীদের মালামাল বেল্টে এলোপাথাড়ি নিক্ষেপ, হুইল চেয়ার কর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড, টিকিট দুর্নীতি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টাফদের স্বর্ণ ও চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, ,ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে অব্যবস্থাপনা ও আগমনী যাত্রীদের ভোগান্তি, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ,
যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব, পাইলট নিয়োগ কেন্দ্র করে অসন্তোষ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শাখায় যাত্রী হয়রানি, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনিয়ম ও যাত্রী হয়রানিসহ ২৮টি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবেদন দাখিল করা বিভিন্ন সংস্থার রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে পড়ে। প্রতিবেদনে যেসব ব্যত্যয় উঠে এসেছে সেগুলোকে প্রাধান্য দিতে সব সময়ই সচেষ্ট রয়েছেন তারা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিশেষ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সম্প্রতি চরম যাত্রী সংকটে পড়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের (IATA) গাইডলাইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর ৪০ মিনিটের মধ্যে ব্যাগেজ নির্ধারিত বেল্টে পাঠানোর কথা।
কিন্তু র্যাম্প এলাকার অব্যবস্থাপনার কারণে বেল্টে ব্যাগেজ আসতে প্রায় সময়ই ২-৩ ঘণ্টা লাগছে। ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ে অব্যবস্তাপনায়, যাত্রীদের লাগেজ ও মালামাল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। হুইল চেয়ারের কর্মীরা বয়স্ক ও শারীরিক অক্ষম যাত্রীদের এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করানোর পর চেক ইন এলাকায় দীর্ঘ সময় হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখেন। অনেক সময় যাত্রীদের একা বসিয়ে রেখে তারা নিজেদের মধ্যে খোশ গল্প, যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশ/অতিরিক্ত টাকা দাবিসহ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অশোভনীয় আচরণ করে থাকেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টাফরা স্বর্ণ ও চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে কার্গো হেলপার, ক্লিনার, বিমান সিকিউরিটি, ক্যাটারিং স্টাফ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ মিলছে উল্লেখযোগ্য হারে।
প্রায়শই অভ্যন্তরীণ কানেক্টিং ফ্লাইটের যাত্রীরা বেল্ট এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের ফ্লাইট মিস করেন। এছাড়া, টিকিট নিয়ে জালিয়াতি, নিম্ন মানের খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সব মিলিয়ে বিমান বাংলাদেশ যেন অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কিছু অসাধু কর্মচারীদের কারণে সরকারের দেয়া নানান সুযোগ-সুবিধার পরও ঘুড়ে দাঁড়াতে পারছে না বিমান বাংলাদেশ। যা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
আরো পড়ুন:
সোনার হরিণের আশায় দুবাই যেয়ে ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন প্রবাসীরা
হাজিদের নিরাপত্তায় মক্কায় সামরিক বাহিনীর মহড়া
ওমানে বৃষ্টির সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান
বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন
ওমানি যুবকের প্রশংসায় নেট দুনিয়া
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post