পাহারধসে সবাই মারা গেলেও আকস্মিকভাবে বেঁচে যান ছয় মাস বয়সী যমজ সন্তান। এমন মিরাকেল ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ছয় মাসের দুই যমজ শিশুকে বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন মা। গভীর রাতে হটাৎ পাহাড়ধস। এতে তাদের ঘরের ওপর এসে পড়ে বড় মাটির খণ্ড। তাতেই পরপারে পাড়ি জমান শিশু দুইটির মা ও খালা।
শুক্রবার (১৭-জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানার বরিশালঘোনায় পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে নিহত হন। পাহাড়ধসে শাহীনুর মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় তার ছয় মাস বয়সী যমজ সন্তান। নিজের মৃত্যু জেনেও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শাহীনুর বুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন যমজ সন্তান তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নিকে।
এছাড়াও দুর্ঘটনার রাতে খালার বাসায় থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় শাহীনুরের বড় ছেলে তরিকুল ইসলাম তানিম। পাহাড়ধসের পরপরই তাদের উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন। উদ্ধারকারীদের একজন মো. আশিক বলেন, পাহাড়ধস হয়েছে জেনে দ্রুত তাদের ঘরে যাই। এসময় শাহীনুরের বোন মাহিনুর (২০) মাটির নিচে চাপা থাকলেও শাহীনুরের এক পা আটকে ছিল। তখনো শাহীনুরের বুকেই ঘুমিয়ে ছিল দুই শিশু। পরে আমরা দুই শিশুকে উদ্ধার করি। যখন দুই শিশুকে উদ্ধার করি, তখনো শাহীনুরের নিঃশ্বাস, শরীরেও উঞ্চতা ছিল। মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
আরেক উদ্ধারকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহীনুরের শ্বশুরবাড়ি মীরসরাইয়ে। দুই বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন মায়ের বাসায় আসেন। এখানে হাসপাতালে যমজ বাচ্চা হয় তার। প্রসবপরবর্তী সেবার জন্য মা-বোনের সঙ্গে ছিলেন। কয়দিন পরই শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। দুই সন্তানকে টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কয়েকদিন আগে টিকাও দেওয়া হয়েছিল তাদের। তবে আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না শাহীনুরের। ছোট্ট দুই সন্তানও এতিম হলো।
শনিবার (১৮ জুন) সকালে শাহীনুরের মরদেহ যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে, তানহা ও তাকিয়া তখন খালা নার্গিসের বাসায় খেলা করছিল। সময় যত গড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে মায়ের অনুপস্থিতি বুঝতে পারছে অবুঝ এ শিশু দুটি। সন্ধ্যায় কান্নাও করছিল। তাদের কান্না থামানোর জন্য আশপাশের বাসার সবাই জড়ো হয় নার্গিসদের বাসায়। খিদেও পেয়েছিল তাদের। ক্ষুধা নিয়েই একজন খালাতো বোনের কোলে ঘুমিয়ে গেলেও অন্যজন আঙুল মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।
যে বাসাটি ধসে পড়েছে সেটি শাহীনুরের বাবার বাসা। কিছুটা দূরে অবস্থিত বোন নার্গিসের বাসায়ই ছিলেন শাহীনুর। কিন্তু শুক্রবার দিবাগত রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই বাাসয় ঘুমাতে যান শাহীনুর। কে জানতো, এই ঘুমই বাবা-মায়ের সঙ্গে তার শেষ ঘুম। পাহাড়ধসে আহত অবস্থায় শাহীনুরের বাবা-মাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তারা আশঙ্কামুক্ত।
যমজ শিশুর বাবা জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘটনার সময় ছেলে তানিমকে নিয়ে শ্যালিকার বাসায় ছিলাম। রাতে যখন বৃষ্টি বাড়ছিল, তখন তাদের চলে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। মা ছাড়া ছয় মাসের দুই শিশুকে নিয়ে উৎকণ্ঠার কথাও জানান জয়নাল।
শুক্রবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকায় দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। পাহাড়ধসের ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার করে দেওয়া দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ওমান ক্রিকেটে বাংলাদেশী প্রবাসীদের জয়জয়কার
সিলেটে আকাশপথের পর এবার রেল যোগাযোগ বন্ধ
ওমানের সালালাহ থেকে ২০ বাংলাদেশি প্রবাসী গ্রেফতার
শ্রমিক নিয়োগ প্রশ্নে মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ বাংলাদেশের
এবার পালালেন নুপুর শর্মা, দিল্লীতে খুজছে মুম্বাই পুলিশ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post