ভারতের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে মুসলিম বিশ্বের দেশের গুলির সঙ্গে। তাই মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকবে ভারত। বিশেষ করে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী বিবিসি।
জিসিসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০২০-২১ সালে এসব দেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলারে। লাখ লাখ ভারতীয় এসব দেশে কাজ করে। লাখ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। আমদানির ক্ষেত্রেও ভারতের কাছে মুসলিম বিশ্বের এই অঞ্চলটি শীর্ষস্থানীয় উৎস।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অঞ্চলে নিয়মিত সফর করেছেন। দেশটি ইতোমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং বিস্তৃত চুক্তির জন্য জিসিসির সাথে আলোচনা করছে৷
নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে আবুধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের গ্রাউন্ড ব্রেকিং অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এটাকে ভারত এবং এ অঞ্চলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের উদাহরণ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল। তেহরানের সাথে দিল্লির সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে উষ্ণ রয়েছে। তবে মহানবীকে সা. নিয়ে বিজেপি নেত্রীর কটূক্তি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ানের আসন্ন ভারত সফরের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিতর্কটি ভারতের সাম্প্রতিক কিছু সাফল্যকে ম্লান করে দিতে পারে। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক জিতেন্দ্র নাথ মিশ্র বলছেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা বাস্তব হয়েছে এবং সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
জিতেন্দ্র নাথ মিশ্র বলছেন, ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে দক্ষ লোকবল দরকার, কিন্তু তা ভারতের নেই। আমরা কূটনীতিকরা ভারতের বন্ধুদের বৃত্ত বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি এবং এ কাজটি একপ্রকার যুদ্ধের মতো।
আরো পড়ুন: রাসূলপ্রেম ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সীরাত প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ১০ লাখ দিরহাম
আরব বিশ্বে কাজ করা সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত বলছেন, ভারত একটি কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং দক্ষ নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাই কেবল এই নেতিবাচক পতন রোধ করতে পারে।
তিনি নুপুর শর্মার অন্যায় মন্তব্যের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পক্ষে। যাতে সুনাম নষ্টকারী পাশবিক মনোভাবের ব্যক্তিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।
উইলসন সেন্টার থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের এশিয়া প্রোগ্রামের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বিদেশিরা সমালোচনা করলে ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রায়শই আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া দেখান। কিন্তু ইসলামফোবিক মন্তব্যের ক্ষেত্রে তাদের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয় আরব বিশ্বে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ভারতীয় দূতকে প্রত্যাহার এবং ইন্ডিয়ান পণ্য বয়কটের দাবি তোলা হয়। বিশেষকরে ফেসবুক ও টুইটারে দেখা যাচ্ছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
আবর দেশগুলোতে ভারতীয় পণ্য বয়কটের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভারত বয়কট’ হ্যাশট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কুয়েতের একজন আইনের অধ্যাপক খালেদ বেদুন টুইট করেন, ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ বন্ধ না করা পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য বয়কট করুন।
আরব নিউজের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা কুয়েতের সুপারমার্কেটগুলো ভারতীয় পণ্য নামিয়ে রাখা হচ্ছে। ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কুয়েত বিভিন্ন সুপারমার্কেটে ব্যানারে লিখে দেওয়া হয়েছে, আমরা ভারতীয় পণ্য সরিয়ে দিয়েছি।
সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা এবং দলের দিল্লির মিডিয়া প্রধান নবীন জিন্দাল ইসলামবিদ্বেষী ও মহানবীর (সা.) প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে দেশ বিদেশে তীব্র নিন্দা জানানো শুরু হলে উভয়কেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরো পড়ুন:
ওমানে দুই নারী সহ পাঁচ প্রবাসী গ্রেফতার
বাংলাদেশী কিলার মুসাকে আনতে ওমান যাচ্ছে পুলিশের একটি স্কট টিম
নতুন তেল ক্ষেত্রের সন্ধান পেল ওমান
প্রায় ৯০ শতাংশ কমে ওমানে শুরু হলো প্রবাসীদের নতুন নবায়ন ফি
স্বরনকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষি চট্টগ্রাম
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post