একটা সময় ছিল যখন হজযাত্রীরা তাদের পছন্দমতো এয়ারলাইনসে সৌদি আরব যেতে পারতেন। ২০১১ সালে হজযাত্রীদের এ সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বা সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সৌদিয়া এয়ারলাইনসে ওই দেশে যেতে বাধ্য করা হয়।
দেশের হজযাত্রীদের অর্ধেক বিমানে বাকি অর্ধেক সৌদিয়া বহন করেছে। ১১ বছর ধরে চলা এই সিন্ডিকেশন এবার ভাঙতে যাচ্ছে। সৌদি সরকার ওই দেশের আরেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইনস ফ্লাইনাসকে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে।
সৌদি আরবের এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় হয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গতকাল রবিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে পৌঁছেছে। বেবিচকের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এরই মধ্যে ফ্লাইনাস এয়ারলাইনসকে ওঠা-নামার অনুমতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্ধেক হারে উভয় দেশের এয়ারলাইনসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহন করার চুক্তি রয়েছে। ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস সৌদি অংশের অর্থাৎ দেশটির ৫০ ভাগের একটি অংশ পরিবহন করবে। তা ঠিক কত শতাংশ সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াকুব শরাফতি গতকাল বলেন, ‘ফ্লাইনাস এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী পরিবহনে অন্তর্ভুক্ত করায় এ সেক্টরে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এ বছর সম্ভব না হলেও আশা করি আগামী বছর বাংলাদেশ সরকারও একাধিক এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী বহনের অনুমতি দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে হাব সহ-সভাপতি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পরও আমরা বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইনসের বাইরে গিয়ে থার্ড ক্যারিয়ার যুক্ত করতে পারিনি।
বিষয়টি দুই দেশের পারস্পরিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করে।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরব তাদের অংশের যাত্রী দুই এয়ারলাইনসের মধ্যে ভাগ করে দিলেও বাংলাদেশ অংশের যাত্রী একাই বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। হজযাত্রী বহনের জন্য বিমান দুটি এয়ারক্রাফট লিজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ৫০ শতাংশ হারে দুই এয়ারলাইনসের ভাগাভাগির মাধ্যমে লাভবান হয়েছে সৌদি আরব। সৌদিয়া নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে হজযাত্রী বহন করেছে। আর বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ ভাড়া করতে হয়েছে।
বিষয়টি ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার’ মতো। সিন্ডিকেশনের ফাঁদে ফেলে সৌদিয়া এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বলে তারা মনে করেন। একটি হজ এজেন্সির পরিচালক জানান, পছন্দমতো এয়ারলাইনসে যেতে না পারার কারণে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। বিমান এবং সৌদিয়া তাদের সুবিধামতো টিকিট ইস্যু করত।
হজযাত্রীরা প্রস্তুত কি না তা তারা আমলেই নিত না। টিকিট না পাওয়ার কারণে অনেক হজযাত্রী দিনের পর দিন হজক্যাম্পে কাটিয়েছেন। ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
সৌদি আরবের মতো বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিমানের পাশাপাশি আরও কিছু এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী বহনের অনুমতি দেওয়া। একইসঙ্গে এমিরেটস, কুয়েত এয়ারলাইনস, ফ্লাইদুবাই, কাতার এয়ারওয়েজ, গালফএয়ারসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অন্যান্য এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী বহনের অনুমতি দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সরকার আন্তরিকভাবে চায় সহজে হজযাত্রীদের হজ করিয়ে আনতে। দিন দিন মুসলিমপ্রধান এই দেশে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে উঠেছে এটা। অথচ সৌদি আরবের সঙ্গে দর কষাকষিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে।
এদিকে কোনো কিছু চূড়ান্ত না করেই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। অথচ সরকার এখনো হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করতে পারেনি। হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর পর্যায়ক্রমে হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন, প্রধান এজেন্সি নির্ধারণ, মোনাজ্জেম নির্ধারণ, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আবাসন ও মোয়াল্লেম ফির অর্থ সৌদি আরবে পাঠাতে হয়।
এ ছাড়াও সৌদি মোয়াল্লেম নির্ধারণ, বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং সার্ভিস, গাড়ির চুক্তিসহ অন্যান্য কাজ শেষ করতে হয়।এসব কাজ শেষে ভিসা ইস্যু করে হজ ফ্লাইটের ঘোষণা দিতে হয়। হজ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে ফ্লাইট শুরুর আগে ৬ থেকে ৭ মাস সময় পাওয়া যেত।
আরো পড়ুন:
পবিত্র কোরআন শরীফ কীভাবে ছাপা হয়?
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
করোনা মোকাবিলায় ওমানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post