ওমানের রাজধানী মাসকাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ দেশটির সবচেয়ে উঁচু ও সুন্দর মসজিদ। মসজিদটি ৪ মে ২০০১ উদ্বোধন করা হয়। ওমানের তৎকালীন সুলতান কাবুস বিন সাঈদ মসজিদটি নির্মাণ করেন তাঁর শাসনকালের তিন দশক উদযাপন উপলক্ষে। ১৯৯৩ সালে মসজিদের নকশা নির্ধারণ করতে প্রকৌশলীদের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
১৯৯২ সালে সুলতান কাবুস মসজিদটি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরের বছর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নকশা নির্বাচন করা হয়। অংশ নিয়েছিলেন দেশি-বিদেশি নামকরা নকশাবিদরা। ১৯৯৫ সালে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। দায়িত্ব পায় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কার্লিয়ন আলাওই। মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জাতীয় যাদুঘর, মজলিশ, রয়েল ওপেরা হাউজের মতো ওমানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই কোম্পানিরই বানানো।
স্থপতি ইরাকের মোহাম্মদ সালেহ মাকিয়া এবং লন্ডনের কুড ডিজাইন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ছয় বছর চার মাসে মসজিদটি তৈরি হয়। ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ব্যবহার করা হয় বিশ্বের নানা জায়গার নামি-দামি সব উপকরণ। ৩০ হাজার মেট্রিক টন সেরা মানের বেলেপাথর আনা হয় ভারতের খনি থেকে।
দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝাড়বাতি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট, যদিও একসময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্পেট আর ঝাড়বাতির জন্য নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছিল গিনেস বুকে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। সর্ববৃহৎ কার্পেটের রেকর্ডটি হাতছাড়া হয় ২০০৭ সালে আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদে এর চেয়ে বড় কার্পেট স্থাপনের মাধ্যমে। আর ঝাড়বাতির রেকর্ডটি হাতছাড়া হয় ২০১০ সালে কাতারের দোহায় আল-হাতমি ভবনের লবিতে সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি বসানোর পর।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এই মসজিদে প্রতিদিন হাজারো রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়, মাস্কাটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আসেন এখানে ইফতার করতে। সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর জন্য মসজিদটি এখন ওমানের প্রধান পযর্টন আকর্ষণও বটে। বছরজুড়ে ভিড় থাকে বিশ্ব পর্যটকদের। এটি ওমানের একমাত্র মসজিদ যেখানে অমুসলিমরাও যেতে পারেন।
এই মসজিদ ওমানের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। মসজিদের চারটি মিনারের মধ্যে একটির উচ্চতা ৯০ মিটার। এ ছাড়া ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের প্রতীক হিসেবে মসজিদে পাঁচটি বিশেষ স্তম্ভও স্থাপন করা হয়েছে। এটি ওমানের সবচেয়ে বড় মসজিদও। এখানে একসঙ্গে ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মূল প্রার্থনা কক্ষে ছয় হাজার ৫০০, বাইরে আট হাজার এবং নারীদের নির্ধারিত কক্ষে সাড়ে ৭০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।
সুলতান কাবুস মসজিদে ঝোলানো হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ঝাড়বাতি। ইতালির তৈরি ২৪ ক্যারেট সোনায় মোড়ানো ঝাড়বাতিতে আছে ছয় লাখ সরোভস্কি স্ফটিক এবং এক হাজার ১২২টি বাল্ব। এটি মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষে ঝোলানো হয়েছে এবং মসজিদে অনুরূপ ৩৪টি ছোট ঝাড়বাতি আছে। মূল প্রার্থনা কক্ষে বিছানো হয়েছে ২১ টন ওজনের হাতে তৈরি কার্পেট। ৬০০ ইরানি নারী চার বছরে দৃষ্টিনন্দন কার্পেটটি তৈরি করেছে।
সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদের অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক দৃষ্টান্ত ৫টি মিনার, মূলত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ প্রতীকস্বরূপ পাঁচ মিনারের সম্মিলন। ৩০০ ফুট উচ্চতার বড়টি কেন্দ্রীয় গম্বুজের পাশে এবং প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতার ছোট চারটি মিনার মসজিদের ৪ কোণে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সে আছে দ্বিতল পাঠাগার, যা ওমানের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। পাঠাগারে বিভিন্ন বিষয়ে ২৩ হাজার ৩৪২টির বেশি বই রয়েছে প্রতিবছর যার পরিমাণ বাড়ছে।
আরো পড়ুন:
পবিত্র কোরআন শরীফ কীভাবে ছাপা হয়?
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
হিজাব ইস্যুতে মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে: মিস ইউনিভার্স
প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post