আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো এক বাংলাদেশী প্রবাসীকে আজীবনের জন্য মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হাইকমিশনের তৎপরতায় ক্ষতিপূরণ ও মাসিক ভাতা পাচ্ছেন দেশটিতে দুর্ঘটনায় আহত দেলোয়ার (৩২)। তিনি এককালীন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৭ লাখ ৭ হাজার টাকা। এছাড়াও আজীবন মাসিক ভাতা হিসেবে ৭৫০ রিঙ্গিত বা ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা করে বাংলাদেশে বসেই পাবেন তিনি।
মালয়েশিয়ার ইতিহাসে এটিই প্রথম, এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো প্রবাসীকর্মী আজীবন পেনশন পাননি। এই প্রথম দেলোয়ারকে দিয়ে শুরু হলো বলে হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে দেশে অবস্থানরত দেলোয়ারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানান, তিনি দেশে আসার পরপরই ৭ লাখ ৭ হাজার টাকা পেয়েছেন। হাইকমিশন সহায়তা না করলে ক্ষতিপূরণ পেতেন না বলে তিনি হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রেমিট্যান্সযোদ্ধা দেলোয়ারের দেশের বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি ২০১৬ সালে ভাগ্যের চাকা বদলাতে মালয়েশিয়া যান। প্রথমদিকে ভালোভাবেই দিন পার হলেও হঠাত একদিন কাজে থাকাবস্থায় এক দুর্ঘটনায় তার বামহাত কেটে ফেলতে হয়। এর মধ্যেই মালিকপক্ষ তড়িঘড়ি করে তাকে দেশে পাঠানোর চেষ্টা চালায়। বিমানের টিকিট করে দেলোয়ারের হাতে তুলে দেয় মালিকপক্ষ। ক্ষতিপূরণের টাকা চাইলে মালিকপক্ষ অসম্মতি জানায়।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে দেলোয়ার সোজা চলে যান হাইকমিশনে। মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। হাইকমিশন দেলোয়ারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। যতদিন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করবে ততদিন দেলোয়ার মালয়েশিয়ায় অবস্থান করবে বলে সিদ্ধান্তে অটল ছিল হাইকমিশন। এরপর হাইকমিশনের তৎপরতায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেলোয়ারের কেটে ফেলা বাম হাতের জায়গায় কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দেয়।
হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীদের মেধা, শ্রম ও দক্ষতা বিশ্বে প্রশংসিত। একইসঙ্গে প্রবাসীরা অবস্থানকারী দেশ এবং নিজ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। করোনাকালে সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় কাজ করেছেন। প্রবাসী বৈধ কর্মীদের নিয়োগকর্তা সোকসোর সদস্য না পেলে যেন হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রত্যেক কর্মীকে বিমার আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৬ হাজার ১৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মী সকসোর সদস্যপদ লাভ করেছেন। এরই মধ্যে ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার বিমা আদায় করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অস্থায়ী অক্ষমতাবরণকারী ৩ হাজার ১৭৮ জনকে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ববরণকারী ৬৮ জনকে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, ২১৯টি মরদেহ পাঠানো বাবদ ২ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত ৮৫০ জনকে ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের প্রামাণিক নামে এক প্রবাসী ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ পেয়েছেন বলেও জানান গোলাম সারওয়ার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post