ছুটি শেষে গাজীপুরের সাকিবের (ছদ্মনাম) সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ২৪ জানুয়ারিতে। এর আগে আত্মীয়-স্বজন থেকে বন্ধু, কারও নিমন্ত্রণে কার্পণ্য করেননি। শেষ সময়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গেও চলেছে আড্ডা। ফলাফল ২৪ জানুয়ারিতেই করোনা টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়েন। এদিকে ভিসার মেয়াদ আছে মাত্র ১০ দিন। ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে এখন উদ্বেগে দিন কাটছে সাকিবের।
সূত্র জানায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে দিনে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বিদেশ যাচ্ছেন। এর মধ্যে দিনে পাঁচ শতাধিক প্রবাসীর বিদেশযাত্রা আটকে যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে। শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের ফ্লাইটের ৬ ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা হয় বিমানবন্দরে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারেরও বেশি যাত্রীর করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।’
নোয়াখালী থেকে মোটা অঙ্কের টাকায় গাড়ি ভাড়া নিয়ে ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন দুদু মিয়া। সন্ধ্যায় দাম্মামের ফ্লাইটে ওঠার কথা তার। বায়েজিদপুর জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে স্যাম্পল দিয়েছিলেন তিনি। ৪৫ বছর বয়সী এই প্রবাসী বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তার মোবাইলে রিপোর্ট আসে তিনি করোনা আক্রান্ত।
দুদু মিয়া বললেন, ‘ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ১৫ দিন আগে সৌদিতে যোগাযোগ করে ১০ দিন বাড়িয়েছিলাম। হাতে আছে ছয় দিন। এখন আবার ছুটি বাড়াতে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু কী হবে বুঝতে পারছি না।’ সামান্য শারীরিক দুর্বলতা ছাড়া আর কোনও উপসর্গ নেই দুদু মিয়ার। বাইরে ঘোরাফিরা বেশি না করলেও বাড়িতে মিস্ত্রি ডেকে কিছু কাজ করিয়েছিলেন। বাইরের লোকজনের যাতায়াত ছিল। ধারণা করছেন, সেখান থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত একদিনে (২৫-২৬ জানুয়ারি) শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৫২৭ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। শনাক্তের হার ৩১ শতাংশেরও বেশি।
বিদেশগামী যাত্রীদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. শাহরিয়ার বলেন, ‘ফ্লাইটের কমপক্ষে সাত দিন আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশ যাওয়ার জন্য কেনাকাটা, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করা যাবে না। এ সময় সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে। এমনকি বিমানবন্দরে আসার সময়ও অহেতুক আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনা যাবে না।’
শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, এতদিন সবার ধারণা ছিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি বা সর্দির কোনও না কোনও উপসর্গ থাকবে। এখন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন উপসর্গ ছাড়া।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সাত দিনের মধ্যে তিনি আর বিদেশ যেতে পারবেন না। ২০২১ সালের জুনে জারি করা নির্দেশনায় আরও বলা হয়, সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় পরীক্ষা কলে নেগেটিভ রিপোর্ট এলে দেশত্যাগ করতে পারবেন তিনি।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post