নির্মাণকাজের জন্য পরবর্তী ছয় মাস রাতে বন্ধ থাকছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে। সে অনুযায়ী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার কথা। তবে এ সিদ্ধান্ত থেকে হয়তো আজ রাতের জন্য সরে আসতে হচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতি চলবে আগামী ছয় মাস।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না হওয়ায় রাত সাড়ে ১০টার পর শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যায়নি কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। অনেক কাউন্টারেই ইমিগ্রেশন পুলিশের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, রাতে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটে চাপ রয়েছে। রয়েছে যাত্রীদের চাপও। এ কারণে অধিকাংশ যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়নি। তাই নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়া সম্ভব হয়নি।
এক মাস আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছিল, সংস্কারকাজের জন্য ১০ ডিসেম্বর (গতকাল) থেকে ২০২২ সালে ১০ জুন পর্যন্ত বিমানবন্দরে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ থাকবে।
বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণকাজের অংশ হিসেবে হাইস্পিড কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ চলবে। পাশাপাশি একই সময়ে লাইটিং সেক্টরের কাজ চলবে। তবে বিমানবন্দরের অন্যান্য কার্যক্রম চলবে। এ সময় জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হলে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাবে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট প্রতিনিধি বলে, বিমানবন্দরে বর্তমানে যাত্রীরা হইহুল্লোড় ও চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। রাত সাড়ে ১১টায় আমাদের একটি ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও অনেক যাত্রীর এখনো ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়নি।
রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের রিয়াদ ও জেদ্দাগামী, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী, তার্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তাম্বুলগামী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রিয়াদগামী, বিমান বাংলাদেশ ও মালিন্দো এয়ারওয়েজের কুয়ালালামপুরগামী, বিমানের আবু ধাবিগামী ও কুয়েত এয়ারের কুয়েত সিটিগামীসহ ১৫-১৭টি ফ্লাইট চলাচল করার কথা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইনসের ৮৫ থেকে ৯০টি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে গড়ে ১০ হাজার যাত্রী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
তারা আরও জানায় , বিদেশগামীদের জন্য বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে মোট তিনটি গেটে ইমিগ্রেশন কাউন্টার রয়েছে। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে মোট চার হাজার মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রী চলাচল করেন। এই তিনটি ইমিগ্রেশন গেট চার হাজার যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। আজ দুটি গেটের কাউন্টারে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চলছে। একটি সম্পূর্ণ বন্ধ।
যে দুটি গেট খোলা, সে দুটোর অনেক কাউন্টারেও ইমিগ্রেশন অফিসার নেই। সব মিলে হযবরল অবস্থা। আজ রাতে হয়তো রানওয়ে বন্ধ রাখা সম্ভব হবে না।এয়ারলাইনসগুলো বলছে, ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকায় রাত ও ভোরের সময়সূচি আগে-পরে করে দিনে আনা হয়েছে। এতে যাত্রী ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়বে।
রাত সোয়া নয়টার ফ্লাইটে দোহা যাবেন জাহিদুর রহমান। তিনি জানান, টার্মিনালে প্রবেশের সময় তাঁর স্বজনকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এরপর তিনি এক হাতে একটি ব্যাগ ও মাথায় আরেকটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে টার্মিনালের সামনে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হলো, যাত্রী ছাড়া কারও ওপরে ওঠার অনুমতি নাকি নেই। আধা ঘণ্টা ধরে ঘুরলাম, কিন্তু কোথাও কোনো ট্রলি ফাঁকা পেলাম না।’
বিমানবন্দরের ভেতরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দেখা যায়, শারজা থেকে আসা একটি ফ্লাইটের ৫০ জনের মতো যাত্রী সারি বেঁধে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করছেন। এক নারী যাত্রী বলেন, ‘১৫ মিনিট ধরে ট্রলির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। চারটা ব্যাগ নিয়ে কীভাবে টার্মিনাল থেকে বের হব, বুঝতে পারছি না।’
এদিকে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীসেবার জন্য বিমানবন্দরে প্রায় ২ হাজার ২০০টি ট্রলি আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ট্রলি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। যাত্রীরা যাঁরা ট্রলি নিচ্ছেন, কয়েক ঘণ্টা সেগুলো দখল করে রাখছেন। যাত্রীর চাপ বাড়ায় সমস্যাটি বেশি হচ্ছে। নতুন করে ট্রলি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
Discussion about this post