সোনার হরিণের আশায় ওমান হয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে যে কয়টি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা অংশই ওমানের হরমুজ প্রণালি হয়ে ইরান দিয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন বলে জানাগেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে।
হবিগঞ্জের মো. ওয়াসিম দেশে ছিলেন একজন মুদি দোকানি। কিন্তু ওই ব্যবসার আয়ে তার পরিবারের দুঃখ-কষ্ট শেষ হয় না। অবশেষে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। উন্নত জীবনের আশায় প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে ২০১৮ সালে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তি করে প্রথমে পাড়ি জমান মধ্যপাচ্যের দেশ ওমানে।
সেখানে ১ বছর থাকার পর নৌপথে চলে যান ইরান। ইরানে গিয়ে দেখতে পান তার সঙ্গের লোকজন ইউরোপের উদ্দেশে ইরান ছেড়ে চলে যাচ্ছে তুরস্কে। ইরানের বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে পরিচয় হয় ওয়াসিমের। সেই দালালের সঙ্গেও চুক্তি করে চলে গেলেন তুরস্ক। কিন্তু প্রায় ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় ইরানের সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্ক প্রবেশ করেন ওয়াসিম।
তার স্বপ্ন আরও উন্নত জীবনের। সেখানে তার সঙ্গের মানুষজন তুরস্ক থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ইতালি, ফ্রান্সের মতো দেশে চলে যাচ্ছেন। স্বপ্নবিলাসী ওয়াসিমও দ্বারস্থ হলেন এক দালালের। সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে দালালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় নৌপথে ওয়াসিমকে ইতালি পাঠাবে। চুক্তি করা টাকা আদায় করে ৫৬ জন বাংলাদেশিকে গত ৩০ অক্টোবর একটি জাহাজে তোলে দালাল চক্র।
গ্রিস সীমান্তে যাওয়ার পর জাহাজের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। পরে জাহাজটি কার্পাথোস দ্বীপ থেকে ভেসে যাওয়ার সময় বিপদ সংকেত জারি করে। ক্রিট দ্বীপের কাছে সমুদ্র থেকে ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই একটি কার্গো জাহাজকে উদ্ধার করেছে গ্রিস। গত ৩১ শে অক্টোবর রাতে তুর্কি পতাকাবাহী জাহাজ থেকে প্রায় ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী কোস দ্বীপে অবতরণ করে।
গ্রিক কোস্ট গার্ডের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যেখানে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই জাহাজে আফগান, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি ৪০০ নাগরিক ছিলেন। বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে গ্রিস।
গ্রিসের অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়কমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওপেন টিভিকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যদি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে একটি যৌথ সমাধানে বা চুক্তিতে পৌঁছতে পারি, যাতে করে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধির আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়।’
মন্ত্রণালয় সূত্র ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, কোস দ্বীপে অবস্থিত অভ্যর্থনা কেন্দ্রে আগত ৪০০ জনের মধ্যে ২৫০ জনই পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নাগরিক। পাকিস্তানি ১৯২ জন, বাংলাদেশি ৫৬ জন রয়েছেন এই দলে।
এছাড়াও রয়েছেন ১১০ জন আফগান নাগরিকও সিরিয়া, ইরান, লেবানন ও মিশর থেকে আসা কয়েকজন অভিবাসনপ্রত্যাশীও। প্রায় চারশো জন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৪০ জন দাবি করেছেন যে তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক।
উদ্ধার বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরত পাঠাতে চায় গ্রিস। এ খবরে হতাশা দেখা দিয়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও তাদের স্বজনদের মাঝে। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ ঋণ করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপ সীমান্তে প্রবেশ করলেও স্বপ্ন পূরণের আগেই তাদের তাদের স্বপ্ন দূ:স্বপ্নে পরিণত হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post