ওমানে খেলা বলতে একমাত্র ফুটবলকেই বোঝেন স্থানীয় মানুষ। ক্রিকেটটা যেন শুধু আল আমেরাত স্টেডিয়ামেই সীমাবদ্ধ। তবে চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করে ওমানের ক্রিকেট বিশ্বের নতুন আকর্ষণ কেড়েছে।
কারণ বিশ্বকাপের মুল লড়াইয়ে জায়গা পাওয়ার একটি ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে দেশটি। এমনকি বাংলাদেশের মতো অভিজ্ঞ একটি ক্রিকেট দলকে খুব শক্তভাবে মোকাবিলা করে হেরেছে ওমান। ফলে মরুর দেশ ওমান কি করে ক্রিকেটে এতো উন্নতি করলো সেই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে।
ওমান ক্রিকেট দল সম্পর্কে সবচেয়ে অবাক করা তথ্যটি হচ্ছে, এই দলে যারা খেলেন তারা কেউই ওমানের নাগরিক নন। তারা সবাই প্রবাসী। হয় পাকিস্তান নতুবা ভারতের নাগরিক। এরা সবাই শৌখিন ক্রিকেটার, ওমানে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেটটাও খেলেন।
দেশটিতে পেশাদার ক্রিকেট কাঠামো বলতে কিছু নেই। তবে ধীরে ধীরে সে পথে এগোচ্ছে ওমান কর্তৃপক্ষ। জাতীয় দলের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটেও অবশ্য ভারত ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারের সংখ্যাই বেশি।
ওমানের ক্রিকেট চালানও একজন ভারতীয়।
পঙ্কজ খিমজি নামের এক ভারতীয় ধনকুবের ওমান ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘদিনের প্রধান নির্বাহী। তাঁর আগে পঙ্কজের বাবা কানাকসি খিমজির হাত ধরে ওমানে ক্রিকেটের আবির্ভাব। ইংরেজদের ওমান শাসনের সময় খিমজিরা তাদের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতেন। সেই পরিবারের সদস্য পঙ্কজের হাত ধরেই ওমান এবার বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হলো।
ওমানি ক্রিকেটে অবশ্য বাংলাদেশের ছোঁয়াও আছে। এখানকার স্থানীয় লিগে প্রচুর বাংলাদেশি ক্রিকেটার খেলেন। বাংলাদেশে বয়সভিত্তিক দলে থাকা চট্টগ্রামের রাশেদ আহমেদ সে রকমই একজন। রাশেদ মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, দলের প্রয়োজনে বাঁহাতি স্পিনও করেন।
তাঁর বড় ভাই মোহাম্মদ আরশাদ ওমানপ্রবাসী। ক্রিকেটের প্রতি আরশাদের ভালোবাসা ছিল বলেই প্রবাসজীবনেও ওমানের স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতেন তিনি। ওদিকে দেশে রাশেদ তখন চোটগ্রস্ত, আঘাতের সঙ্গে লড়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেখানে ব্যর্থ হলে বড় ভাইয়ের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ওমান ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
চট্টগ্রামের এই তরুণ ক্রিকেটার বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। সে দলে তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। চোটে না পড়লে হয়তো ২০২০ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য হওয়ার দৌড়ে থাকতেন এই অলরাউন্ডারও।
রাশেদের মতো ওমান লিগে খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারের সংখ্যাটা যেহেতু কম নয়, ভবিষ্যতে ওমানের জাতীয় দলে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের ভিড়ে কোনো বাংলাদেশির নাম দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্য বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মতো রাশেদের স্বপ্নও তাই, ‘এখানে ক্রিকেট খেলে আমার ভালো করার সুযোগ আছে। আরও অনেকেরই আছে। এখন যেমন অনেক ভারতীয় ও পাকিস্তানি ক্রিকেটার ওমান দলে খেলছে, আমাদের ক্রিকেটাররাও হয়তো একদিন জাতীয় দলে উঠে আসবে।’ রাশেদ জানালেন, কয়েক বছর আগেও ওমানে প্রবাসীদের মধ্যে ভারতীয়রাই বেশি ছিলেন। এখন দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশের। তাঁর আশা, ‘ক্রিকেটেও দেখবেন এর প্রভাব পড়বে।’
তবে ওমান ক্রিকেট চায় প্রবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠুক। দেশটিতে ক্রিকেটের সত্যিকারের প্রসার তখনই হবে, যখন স্থানীয়রা খেলাটায় আগ্রহী হয়ে উঠবেন। ওমানে সেই চেষ্টাটা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিটি দলের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে অন্তত একজন ওমানি ব্যাটসম্যান রাখা বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
ওমানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠটাতেও আছে বাংলাদেশিদের ছোঁয়া। আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ১৯ জন মাঠকর্মীর ১৫ জনই বাংলাদেশি। ক্রিকেটের পথে দেশটির এগিয়ে যাওয়ার ভিত যিনি গড়ে দিয়েছেন, তিনি অবশ্য শ্রীলঙ্কান। শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক দুলীপ মেন্ডিস প্রায় এক দশক ধরে ওমান ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। মেন্ডিসের এই উপস্থিতি যেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির উপমহাদেশীয় ক্রিকেট কাঠামোরই প্রতীক।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post