সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম প্রায় ৬ ঘণ্টা স্থগিত থাকার পর সচল হয়েছে। ফেসবুকের ইতিহাসে এত দীর্ঘক্ষণ বন্ধ আগে কখনই ছিলোনা। এতো দীর্ঘ সময় ধরে সার্ভার ডাউন হওয়া ঘটনা বিরল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ফেসবুক ও অন্যান্য অ্যাপে ১৪ ঘণ্টার মতো এ ধরনের সমস্যা হয়েছিল।
ঠিক কী কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফেসবুকের পক্ষ থেকেও ত্রুটির কারণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তবে কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ডোমেইন নেম সিস্টেম বা ডিএনএস ত্রুটি ছিল বলে ধারণা করছেন। আবার কারও মতে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ সবই একটি বিজিপি কনফিগারেশনের সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ফেসবুকের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে, বাংলাদেশ সময় সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ১০টার পর থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। এরপর মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে সচল হয় ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম।
ওয়েবসাইট মনিটরিং গ্রুপ ডাউনডিটেক্টর জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী এক কোটির বেশি মানুষ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ফেসবুক বন্ধ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ এবং সময় টিভির সম্প্রচার প্রধান সালাউদ্দিন সেলিম বলেন,
“ফেসবুকের ইতিহাসে এটাই কোন বড় আউটেজ যেটা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ ঘন্টা (বাংলাদেশ সময় ৪ অক্টোবর) রাত ৯:১৫মি থেকে ৫ অক্টোবর) মধ্যরাত ৩:৩০ পর্যন্ত) ফেসবুক সহ ফেসবুকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এর সেবা বন্ধ ছিল।
ফেসবুক ডাউন থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে, তবে সেটা বিশেষ কিছু লোকেশন কিংবা কিছু কিছু দেশের ক্ষেত্রে। তবে এবারই প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল যেখানে ফেসবুকের হেডকোয়াটারেও সব সেবা বন্ধ ছিল এমনকি ফেসবুকের কর্মীরা যারা অনলাইনে ওয়ার্কপ্লেসে কাজ ক্রেন তারাও লগইন হতে পারেননি।
যাইহোক, এখন সবার প্রশ্ন ঘটনাটা আসলে কি ঘটেছিল?
এর মুল কারণ ছিল ফেসবুকের DNS (Domain Name System) সিস্টেম এর সমস্যা। সাধারণত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করে কতগুলো আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) এর উপর ভিত্তি করে অর্থ্যাৎ একটি কম্পিউটার যখন অন্য একটি কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তখন একে অপরকে চিনে থাকে আইপি এড্রেসের মাধ্যমে।
একইভাবে আমরা যখন ইন্টারনেটে কোন ওয়েবসাইট কিংবা সার্ভারে প্রবেশ করি, তখন মুলত উক্ত সার্ভারে প্রবেশ করি তার নির্ধারিত আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। প্রক্যেকটা সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট ইন্টারনেট আইপি থাকে, যেটা হয় ইউনিক (মোবাইল নাম্বারের মতো, অন্য কারও সাথে মিলবে না)। যেমন ফেসবুকের অনেকগুলো আইপি’র মধ্যে একটি হলো- 63.69.176.13, কিন্তু একজন সাধারন মানুষের পক্ষে এত আইপি এড্রেস কখনোই মনে রাখা সম্ভব নয়, তাই এর সহজ সমাধানে ব্যবহৃত হয় DNS (Domain Name System)।
যার কাজ হচ্ছে আইপি এড্রেসকে নামে কনভার্ট করা। উদাহরন হিসেবে আমরা যখন facebook.com লিখি তখন এই DNS প্রযুক্তি প্রথমে খুজে বের করে Facebook.com এর সার্ভারের আইপি এড্রেস কি, তারপর facebook.com আর উক্ত সার্ভার আইপি এড্রেসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আমাদেরকে সার্ভার পর্যন্ত পৌছে দেয়।
ঠিক একইভাবে আমরা যখনই কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। আমাদেরকে কষ্ট করে আইপি মনে রাখতে হয় না শুধু ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা মনে রাখলেই হয়। এখন প্রশ্ন থাকতে পারে ফেসবুকের DNS সমস্যা হলে whatsapp আর instagram এও কেন এর প্রভাব পড়বে? এর উত্তর হলো- facebook, instagram & whatsapp এদের সবার ডাটা ই থাকে একটি সার্ভার সিস্টেমে এবং ব্যাকইন্ডে ডাটাবেস কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে সবাই ফেসবুকের DNS সিস্টেম (facebook.com) ব্যবহার করে, তাই ফেসবুকের DNS সমস্যা হওয়াতে বাকিদেরও হয়েছে।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post