জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে যখন উৎসবমুখর যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালিপাড়া, ঠিক সেই মুহূর্তে একের পর এক অনাকাংক্ষিত ঘটনায় উত্তাল বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস এলাকা। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নেতৃত্বের কোন্দলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ এবং রাজনৈতিক রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনা সামাল দিতে নিউইয়র্ক পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে।
অন্যদিকে প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। বাংলাদেশি দুটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও দিন শেষে বদনাম হয়েছে বাংলাদেশ-এর, এমন মন্তব্য করেছেন সাধারণ প্রবাসীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে দিনের প্রথম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে দরুদ মিয়া রনেল ও কায়কোবাদ খানের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হয়। তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তিও হয়েছে। সাংবাদিকদের সামনেই এ ঘটনা চলে বেশ কিছুক্ষণ।
সন্ধ্যায় ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির ব্যানারে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে তাদের সমাবেশে বাধা দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে বাদানুবাদ হলেও বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।
এদিকে রাত ১০টার দিকে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিট ও ৩৭ অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ ৭৩ স্ট্রিটে একটি অস্থায়ী কার্যালয়ে স্থাপন করলে অদূরে ৩৭ অ্যাভিনিউতে একটি অস্থায়ী কার্যালয়ে স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি।
কিন্তু বিএনপির অফিস স্থাপন নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমর্থকরা অফিস স্থাপনে বাধা দিলে শুরু হয় তুমুল মারামারি। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘসময় চলতে থাকে হাতাহাতি ও ধ্বস্তাধস্তি। এসময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
স্থানীয় ১১৫ প্রিসিঙ্কটের পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই পক্ষের মাঝে অবস্থান নেয়। পরে প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের উত্তেজনা। পরে পুলিশ দুই পক্ষতে এলাকা ত্যাগে বাধ্য করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধ্বস্তাধস্তি দেখে জ্যাকসন হাইটস এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তুমুল হট্টগোলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না সেখানে কী ঘটছে। এই অপ্রীতিকর ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা ভয়ে পুলিশকে ফোন করেন।
আরো পড়ুনঃ
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা স্যামুয়েল স্টিফেন জানান, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে ৭৩ স্ট্রিটের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার মতে, এখানে বাংলাদেশিরা মারামারিতে লিপ্ত হয়, যা কাম্য নয়। জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্টের কর্ণধার আফতাবুজ্জামান শিমুল জানান, তারা নতুন রেস্টুরেন্টে খুলেছেন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের দিনভর এলাকায় আড্ডার কারণে তারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের তাড়াতে হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post