রমজান মুসলিম জাতির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এই মাসে মহানবী (সা.)-এর ওপর কোরআন অবতীর্ণের সূচনা হয়েছিলো। রমজানে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের দুয়ার খুলে দেন, বাড়িয়ে দেন প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান। ফলে মুমিন রোজা পালনসহ অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ব্রতী হয়। মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঈমানি উদ্দীপনা ও আনন্দের আবহ।
কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে চলছে লকডাউন। ওমান, সৌদি আরব থেকে লেবানন, এমনকি লিবিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও পড়েছে করোনার প্রভাব ৷ পুরো অঞ্চল জুড়ে মসজিদ বন্ধ রয়েছে ৷ এমনকি মুসল্লিদের তারাবির নামাজও বাসায় থেকে পড়তে বলা হচ্ছে৷
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের ধর্মীয় নেতা রমজান ও ঈদ এবার ঘরে থেকে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন৷ মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের মুয়াজ্জিন আলীমুল্লাহ দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের অন্তর কাঁদছে। আমরা এই পবিত্র মসজিদে দিন রাত সবসময় ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড় দেখে অভ্যস্ত ৷ আমরা মনের গভীরে এ ব্যথা অনুভব করছি ৷’ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কাবাতেও নেই মুসল্লিদের আনাগোনা ৷ অন্য যেকোনো সময় কাবার চারপাশের চত্বর লোকে লোকারণ্য থাকে ৷ গত মাসে উমরাহ হজ্জ্বও বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ ৷ জুলাই মাসের শেষে মূল হজ্জ্বও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ৷ এমন হলে এটিই হবে আধুনিক ইতিহাসে হজ্জ্ব বাতিলের প্রথম ঘটনা ৷ এরই মধ্যে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের হজ্জ্বে আসার আগাম প্রস্তুতি না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ৷
জেরুসালেম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ হোসেইন রমজান মাসজুড়ে মসজিদে নামাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন ৷ এছাড়া রমজান মাসের চাঁদ দেখতে একসঙ্গে জড়ো না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ীই এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ৷ সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশকেই আহ্বান করা হচ্ছে রমজানকে কেন্দ্র করে যাতে বড় কোনো জমায়েত নিরুৎসাহিত করা হয় ৷ রমজানকে কেন্দ্র করে ইফতারের পণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ৷
অর্থনৈতিক অবরোধে বিপর্যস্ত ইরান গত সপ্তাহে তেহরানে কিছু দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে ৷ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ আর অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে হচ্ছে দেশটিকে ৷ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এখন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত, মারা গিয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ৷ দেশটির সর্বোচ্চ বড় ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি দেশটির নাগরিকদের রমজানে বাসায় বসে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন৷
মিশরের রাজধানী কায়রোতে কিছু সড়ক ও বাজারে রমজান উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে ৷ তবে সব ধরনের খাবারের দোকান বন্ধ রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিভিন্ন পরামর্শের তালিকায় বলেছে, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে রোজা থাকার সম্পর্ক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি ৷ অন্যসব বছরের মতো সুস্থ মানুষের রোজা রাখলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না ৷ তবে অন্য সব রোগের মতো কোভিড-১৯ এর রোগীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত ৷
লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই সামাজিক দূরত্ব নতুন কিছু নয় ৷ ৫৪ বছর বয়সী ব্যাংকার করিমা মুনিরের মতে, ‘এ বছর আমার জন্য রমজান একটু আগেই এসেছে৷ কারফিউয়ের সময় রমজানের মতোই অফিসের সময় কমে যায় ৷ রমজান সবসময় দানের মহিমা নিয়ে আসে ৷ এবছর যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ ঘরহারা হয়েছে ৷ তাদের সাহায্য দরকার ৷’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post