মধ্য আকাশে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউম মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপটেন মাহবুবুর রহমান।
গতকাল তিনি জানিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন নওশাদ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’। পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর ক্যাপটেন নওশাদ কাইয়ুমের ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে মেডিকেল টিম সিদ্ধান্ত নেবে।তিনি বলেন, ‘দুপুরে কিংসওয়ে হাসপাতালের একটি সূত্র আমাকে ফোনে ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বেলা ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে ফ্লাইটটিকে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটির এই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। ওইদিন মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
আরো পড়ুনঃ
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
যেভাবে সরকারি অনুদান পাবেন প্রবাসীরা
বিদেশে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন যেভাবে
ফ্লাইটটি অবতরণের পর ক্যাপ্টেন নওশাদকে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ২ দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাকে হাসপাতালের সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এসআইসিইউ) কোমায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রোববার রাতে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের দুই বোন। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপ্টেন নওশাদের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে মত দেন। তবে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ (সোমবার) বেলা ১১টার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।
নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে এবার জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। তবে এটিই প্রথম নয়, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে আরেকটি দুর্ঘটনার হাত থেকে ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল।
বাবার মৃত্যুর ছয় মাস পরে চলে গেলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। বাবার পথ অনুসরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উড়ে বেড়িয়েছিলেন তিনি। বাবা চলে গেছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, বাবা মারার যাওয়ার ৬ মাস যেতে না যেতে এবার তিনিও পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।
বাবা আব্দুল কাইয়ুমও একসময় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ডিসি-১০ উড়োজাহাজের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ‘কোরিয়ান এয়ার’ এবং ‘সৌদি এয়ালাইন্সেও’ দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র এই পাইলট। চলতি বছরেই আব্দুল কাইয়ুম মারা যান।
পেশাগত জীবনে বাবা-ছেলের যেমন মিল রয়েছে, তেমনি চলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আরেকটা মিল রেখে গেলেন তারা। দুজনেরই মৃত্যু হলো ভারতে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে আব্দুল কাইয়ুম মারা যান ভারতের কলকাতায়। ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ১৯৭৭ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগদান করেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post