বৈশ্বিক মহামারী করোনায় কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী। এসব মানুষ পরিবার নিয়ে বিপাকে আছেন এমন তথ্য পুরনো। গত মার্চে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর এক জরিপে দেখা যায় প্রবাসীরা পুরনো ঋণ পরিশোধ করে নতুন দেনায় জড়াচ্ছেন। এতে তাঁদের ঋণ আরও বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দৈনন্দিন খরচ কমিয়েছেন তারা।
এই যখন পরিস্থিতি তখন প্রবাসীদের স্বাবলম্বী করতে সরকারের তরফ থেকে একাধিক আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাস্তবে সেগুলো তেমন কাজে আসেনি।
তবে নতুন খবর হলো, দেশে ফেরা প্রবাসীদের স্বাবলম্বী করতে ফের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া হচ্ছে একটি প্রকল্প।
যার আওতায় প্রথম ধাপে ২ লাখ প্রবাসীকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪২৭ কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। এ খবরটি হয়তো ইতোমধ্যে অনেকেই জেনে গেছেন। তবে কথা হলো এই টাকা কিভাবে পাবেন প্রবাসীরা? টাকা পেতে কোথায় বা তারা আবেদন করবেন? আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র দেখাতে হবে?
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, তাদের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণবোর্ড মূলত সরকারের নেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এজন্য প্রথম পর্যায়ে ত্রিশটি জেলা নির্বাচন করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রথম ধাপের সহযোগিতা দেশের সবজেলার প্রবাসীরা পাবেন না।
তবে পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্পের সব জেলায় যাবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রথম ধাপে যে ত্রিশ জেলার বিদেশ ফেরতকর্মীরা সরকারের সহায়তা পাবেন সে জেলাগুলো হলো। ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ।
ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ ও জামালপুর। রংপুর বিভাগের মধ্যে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও। রাজশাহী বিভাগের পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ। বরিশাল বিভাগের মধ্যে রয়েছে বরিশাল ও পটুয়াখালী। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা।
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও কুমিল্লা। এছাড়া সিলেট বিভাগের দুই জেলা হলো সিলেট ও সুনামগঞ্জ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, শুধু সাড়ে ১৩ হাজার টাকাই নয় প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের আরও অনেক সেবা দেয়া হবে।
যার মধ্যে রয়েছে, বিদেশফেরত বিভিন্ন কাজে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাছাই করা। এরপর স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ জোগাড় এবং তাদের দেশে-বিদেশে চাকরির সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ পাওয়াসহ সব ধরনের সেবা সহজ করা হবে।
প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ছোট ব্যবসার উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য আর্থিক ও পরামর্শ সুবিধা দেওয়া হবে।
এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বিদেশফেরতদের পুনর্বাসনে আর্থিক, কারিগর সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সেবাসমূহ সাধারণ মানুষকে অবহিতকরণে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সেমিনার করা হবে।
ওয়ার্কশপ আয়োজনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচারের ব্যবস্থা ও ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। সবশেষে অরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং শেষে এককালীন নগদ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য দক্ষতা সনদ, পুনরায় বিদেশগমনে সহায়তা, কল্যাণমূলক সেবা জোরদার করা হবে।
আরো পড়ুনঃ
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
ওমান ও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিনের তালিকা
ভিসা নিয়ে সুখবর দিলো ওমান শ্রম মন্ত্রণালয়
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা বলছেন, এ সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে তা করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের জন্য আশীর্বাদ হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
এখন কথা হলো কোন প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের সহায়তার জন্য বাছাই করা হবে? এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রবাস টাইমকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটি নির্ধারিত ত্রিশ জেলায় শুরু হতে এখনো দু মাসের মতো সময় লাগবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কল্যাণবোর্ডের প্রজেক্ট কার্যালয় খোলা হবে।
সরকারের কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। এজন্য আপনি বিদেশ ফেরত তার সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি দেখাতে হবে। প্রকল্পটির অন্যতম একজন কর্মকর্তা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ পরিচালক জাহিদ আনোয়ার প্রবাস টাইমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনাইটেড নেশনস উইমেন, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা যায়, গত বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে অভিবাসীদের প্রায় ৭৭ শতাংশ দেশে চাকরি খুঁজেছেন। এছাড়া ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা উদ্যোগ নিলেও তার সুফল মিলছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের সহায়তার প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান বলেন, ‘বিদেশফেরতদের পুনর্বাসনে আগে ১৫টি জেলায় একটি পাইলট কর্মসূচি নেওয়া হয়। এখন বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বড় পরিসরে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি, এ প্রকল্প করোনায় বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রাখবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post