করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী এক কঠিন সময় পার করছে। এ সময় একে অপরের পাশে না দাঁড়ালে সংকট মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আশেপাশের কেউ আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। করোনা নিয়ে বর্তমান সময়ে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই গুজব। সম্প্রতি দেশের প্রসিদ্ধ গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে করোনা নিয়ে বেশকিছু নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয়, যা অনেকের জন্যই বেশ উপকার দিবে।
করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন তার একটি বিস্তারিত গাইডলাইন উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের একজন সংক্রামক রোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম আর করিম রেজা বলেন, করোনা রোগীর গায়ে হাত দিলেই করোনা হয় না। এটি এক প্রকার Droplet infection. একমাত্র তার হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময়ে লালার সূক্ষ্ম কণিকার মাধ্যমে ভাইরাস তার শরীর থেকে বেরোতে পারে।
এবং তাও আপনার গায়ে লাগলে, পিঠে লাগলে, এমনকি তা খাবারের সঙ্গে আপনার পেটে গেলেও আপনি আক্রান্ত হবেন না। ভাইরাস একমাত্র আপনার শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে গেলেই সংক্রমণ সম্ভব। তাই কোনো করোনা রোগী মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে তুলতে গেলে আপনিও আক্রান্ত হবেন ব্যাপারটা এমননা।
বিপদে পাশে থাকুন। তবেই আপনারও বিপদে মানুষকে পাশে পাবেন। শুধু মনে রাখবেন নাকে বা মুখে হাত দেবেন না। করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার পর স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলুন। অতিমাত্রায় সতর্কতা হিসেবে পরিধেয় পোশাক ধুয়ে গোসল করে ফেলুন।
কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করে না। করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর হার দুই শতাংশের কম (বাংলাদেশে শতকরা ১.৬৪ জন)। বেশিরভাগ করোনা রোগী আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সময় মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। এতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
এসময় রোগীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে সাহস যোগাতে হবে। পরিচিত কেউ আক্রান্ত হলে ফোনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে তাকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করুন এবং রোগীকে সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার দিন। অকারণে করোনা রোগীর ঘন ঘন অক্সিমিটার দিয়ে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ পর্যন্ত থাকলে ভয় হবেন না। বেশিক্ষণ মাস্ক পরিধান করে থাকলে সুস্থ মানুষের অক্সিজেন মাত্রাও কমে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
ওমানের অধিকাংশ প্রদেশে করোনায় মৃত শূন্যের কোঠায়
ওমান ও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিনের তালিকা
ভিসা নিয়ে সুখবর দিলো ওমান শ্রম মন্ত্রণালয়
আক্রান্ত না হলে আগাম ওষুধ বা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুদ করার প্রয়োজন নেই। তাতে সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ে এগুলোর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য সংকট সৃষ্টি করে। বাড়িতে করোনা রোগী না থাকলে মাস্ক পরার দরকার নেই। গৃহবন্দী জীবনে বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন।
তবুও, বাইরে অকারণে ঘোরাঘুরি না করে বরং বাড়িতে বাগান থাকলে সেখানে বা ছাদে একটু হাঁটুন ও শরীরচর্চা করুন। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। শরীরচর্চা করা বা নির্জন ছাদে হাঁটার সময় মাস্ক পরার দরকার নেই।
আপনার রুমে, বাড়িতে, গাড়িতে বা আশেপাশে কেউ না থাকলে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই। বাইরে বের হলে দুই স্তরের ডাবল মাস্ক পরিধান করুন। ভিড় এড়িয়ে পাশের মানুষ থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সামাজিক অনুষ্ঠান, গণজমায়েত, বিনোদন কেন্দ্র, শপিং মল থেকে দূরে থাকুন। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
করোনা সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে অবশ্যই প্রথমে পরামর্শের জন্যে নিকটবর্তী হাসপাতালে যাবেন। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে বেড না পেলেও আপনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে করোনা উড়ে এসে আপনাকে আক্রান্ত করবে না।
প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে সাবধানতা অবলম্বন করে বরং তাকে সাহায্য করুন। ওষুধ, খাবার সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ঘরের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ফোনে কথা বলে চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তার দরজায় রেখে আসতে পারেন।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কিন্তু তাই বলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর থেকে সরে আসবেন না। মনে রাখবেন তাদের বিপদের আপনি দাঁড়ালে একদিন আপনার বিপদেও তারা দাঁড়াবে। করোনা রোগীকে সাহায্য করার সময় আতঙ্কিত না হয়ে ভাবুন চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কীভাবে অবিরাম করোনা রোগীকে সেবা দেওয়ার পরেও সুস্থ থাকেন। তাই আপনার প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত কেউ আক্রান্ত হলে যতটুকু সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তাই আসুন, আতঙ্কিত না হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতির এই দুর্যোগময় সময় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post