বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ও হজ পালনের নিয়ম ও সতর্কতা
হজ পালন ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি মুসলমানদের জীবনকালে একবার হলেও আদায় করাটা ফরজ। যদি হজ পালন করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে ওমরাহ পালন করা যাবে কম খরচে। ওমরাহ সারা বছর পালন করা যায়। এটি মুমিনের পাপ মোচন করে এবং তাকে আল্লাহর কাছে আরো কাছাকাছি যেতে সাহায্য করে। প্রতি বছরে বাংলাদেশ থেকে হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য অনেক মুসলমানের সফর করে থাকেন। এই পবিত্র যাত্রা সফল ও সুন্দর করার জন্য কিছু নিয়ম ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। নিম্নের সে সম্পর্কে আলোচনা করা হ’লঃ-
ওমরাহ ও হজ পালনের নিয়ম
ওমরাহ্ যেহেতু ইসলামের প্রধান মূল স্তম্ভের একটি তাই এর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যা যথাযথ পালন না করলে হজ্জ আল্লাহর কাছে কবুল নাও হতে পারে। তাই এই সকল বিষয়ে সতর্কত থাকতে হবে।
ইহরাম বাঁধা
ইহরাম হলো হাজ্জ বা উমরার ইবাদাতে প্রবেশ করা এবং তা পালন করার নিয়্যাত করা। ওমরাহ ও হজের প্রথম ধাপ হল ইহরাম বাঁধা যা হজ্জের ফরজ কাজের মধ্যে একটি। ইহরাম বাঁধার সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এগুলো হচ্ছে ইহরামের পূর্বে প্রত্যেক পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য গোসল করা সুন্নাত। মিকাত পার হওয়ার আগেই সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিতে হবে। শুধু ওমরাহর নিয়তে এক থেকে তিনবার তালবিয়া পাঠ করতে হবে। তালবিয়া হচ্ছেঃ-“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারিকা লাকা”।
তাওয়াফ করা
তাওয়াফ করা হজ্জের ফরজ কাজের মধ্যে অন্যতম একটি। তাওয়াফ হচ্ছে কাবা ঘরকে প্রদক্ষিণ করা। তাওয়াফ করার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে কালো পাথর বা হাজারে আসওয়াদ এর কাছে গিয়ে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে এ পাথরকে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করা। এইভাবে হাজারে আসওয়াদ কে কেন্দ্র করে ৭ বার পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে হবে।
সা’ঈ করা
সা’ঈ করা হচ্ছে সাফা ও মারওয়া এই দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়ানো বা দ্রুত হাঁটা। কা’বা শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাফা পাহাড় এবং পূর্ব-উত্তর দিকে মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এ দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী সা’ঈ করার স্থানকে মাস’আ বলা হয়। সাফা ও মারওয়ার পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানো বা দ্রুত হাঁটা শেষ করলে সা’ঈ এর কাজ সম্পন্ন হবে।
হলক বা মাথা মুণ্ডন করা
ওমরার পর মাথা ন্যাড়া বা মুণ্ডন করা। পুরুষদের জন্য মাথা মুণ্ডন করতে হবে এবং মহিলাদের জন্য তাদের মাথার সমগ্র চুলের অগ্রভাগ হতে তর্জনী আঙ্গুলের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ কাটতে হবে এক্ষেত্রে নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন করার প্রয়োজন নেই কারণ নারীদের মাথা মুণ্ডন করা হারাম।
তালবিয়া পড়া
ইহরাম বাঁধার পর থেকে মক্কা পৌঁছা পর্যন্ত তালবিয়া পড়া। তালবিয়া হচ্ছে হজ্জের স্লোগান তাই প্রত্যেক হাজীদের তালবিয়া পাঠ করার কোনো বিকল্প নেই। তালবিয়া বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে হজ ও ওমরাহ পালনের সতর্কতা
- পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কিত সকল কাগজপত্র যাচাই করে নিতে হবে।
- হজ ও ওমরাহ যাত্রার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- কোনো নির্ভরযোগ্য হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করতে যেতে হবে।
- ইহরামের জন্য উপযুক্ত পোশাক সাথে নিতে হবে।
- হজে থাকাকালীন সময়ে পুরো সফর জুড়ে দোয়া ও জিকির করা ভালো।
- সালাতের সময়সূচি মেনে সময়মতো সলাত আদায় করে নিতে হবে।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- যদি আরবি না বুঝতে পারেন তাহলে একজন অনুবাদক সাথে নিয়ে যেতে হবে।
- মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত চার্জ করে রাখুন যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
কীভাবে হজে যাবেন?
বাংলাদেশে অনেক হজ্জ এজেন্সি রয়েছে যারা হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ সরবরাহ করে। হজে যাওয়ার আগে একটি নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন করা করা জরুরি। যদি নির্ভরযোগ্য এজেন্সি না পাওয়া যায় তাহলে পরিচিতদের পরামর্শ নিতে পারেন অথবা ওমরাহ প্যাকেজ বিডিস্টল.কম লিঃ এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য হজ এজেন্সি খুঁজে নিতে পারেন।
মনে রাখা ভালো
হজ ও ওমরাহ একটি পবিত্র সফর তাই এই সফরের প্রস্তুতি ভালো ভাবে নিতে হবে এবং হজ্জের সকল নিয়ম(ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব) মেনে চলুন। আল্লাহ তা’আলা আপনার হজ ও ওমরাহ কবুল করুন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post