বাংলাদেশ ও তুরস্কের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মিত্রতার ভিত্তিতে শতাব্দী প্রাচীন। এই বন্ধুত্ব শুধু কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; দুই দেশ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে দুঃসময়ে এবং এখন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে সামরিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে।
তুরস্ক, বিশেষত প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে, বাংলাদেশের সামরিক খাতকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদারে পরিণত হয়েছে। যেখানে অন্যান্য দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কঠিন শর্তের মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে তুরস্ক নিঃস্বার্থ সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে পেয়েছে অত্যাধুনিক বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন, কাবলার মিসাইল সিস্টেম, অটোকার কোবরা লাইটার ভেহিকল, এবং মাল্টিপল রকেট লঞ্চার। এছাড়া, তুরস্ক বাংলাদেশের কাছে ১০৫ ও ১৫৫ মিলিমিটারের আর্টিলারি শেল উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তর করে নজির স্থাপন করেছে।
বিশ্বজুড়ে স্বল্প ব্যয়ে উন্নতমানের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য খ্যাত তুরস্ক বর্তমানে সর্বাধুনিক ড্রোন উৎপাদনে শীর্ষে। সামরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশও এই উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও দৃঢ় করছে।
২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত মিলিটারি ট্রেনিং এগ্রিমেন্টের পর থেকে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ৩,০০০-এরও বেশি সদস্য ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে আধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
বিশেষত, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও তুরস্কের নৌবাহিনীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের স্পর্শকাতর সোয়াটস ইউনিটও তুরস্ক থেকে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি দীর্ঘ ইতিহাসে নিহিত। ১৭শ শতকে চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য জাহাজ সরবরাহ এবং বাংলার বিখ্যাত মসলিন কাপড় দিয়ে অটোমান সুলতানের পাগড়ি তৈরির মতো ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে। বর্তমান সময়েও সেই ঐতিহাসিক বন্ধনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে সামরিক অংশীদারত্ব।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুরস্কের মতো শক্তিশালী সামরিক অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের জন্য শুধু প্রতিরক্ষায় নয়, কূটনৈতিক শক্তি বাড়াতেও সহায়ক হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণের পর তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ফোনালাপ এবং তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ এই অংশীদারিত্বকে আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক শুধু সামরিক অংশীদারত্বে সীমাবদ্ধ নয়; এটি দুই দেশের অগ্রগতি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে উঠছে। এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post