গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্তত দুই হাজার ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত এবং ২০ হাজার মানুষের অঙ্গহানির বিনিময়ে স্বৈরাচার উৎখাত হয়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সাড়ে ১৫ বছরে হাজার হাজার মানুষকে গুম-খুন, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন করে গড়ে তোলা ক্ষমতার দুর্ভেদ্য প্রাসাদ। রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক থেকে হঠাৎ করেই লুটিয়ে পড়তে হয়েছে কোটি কোটি মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভের নর্দমায়। নিñিদ্র দুর্গ গণভবনের ডাইনিং টেবিলে নানা পদের রাজকীয় খাবার সাজানো থাকলেও তা ছুঁয়ে দেখার ফুরসত মেলেনি। কোনো রকমে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়েছে প্রতিবেশী ভারতে। ১৯৮১ সালে যেখান থেকে এসে রাজনীতি শুরু করেছিলেন, সেই প্রভুর আশ্রয়েই তাকে ফিরতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার অকুতোভয় বীরত্ব, আত্মত্যাগে মুক্ত হয়েছে দেশ। দীর্ঘ অমানিশার পর মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ পেয়েছে দেশের মানুষ। অন্যদিকে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের সাথে সাথে এ দেশে পতন হয়েছে ভারতীয় আধিপত্যবাদেরও। শেখ হাসিনার পতনে তিনি এবং তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, তার দোসরদের অন্তরে প্রতিহিংসার অনল জ্বলবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। তারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ষড়যন্ত্র করে দেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করতে চাইবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। পরাজয়ের গ্লানি তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে, আর তারা প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদের মতো একের পর এক ছক কষবে, সে-ও তো জানা কথা। ৫ আগস্ট সন্ধ্যা থেকেই তারা সেটা করেও যাচ্ছে বিরামহীনভাবে। অনুগত সেনা অফিসারদের দিয়ে ক্যু, বিচারবিভাগীয় ক্যু, সংখ্যালঘু কার্ড, ডাকাত লীগ, আনসার লীগ, গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষ, ইসকন, অধিকারের নামে পেশাজীবীদের মাঠে নামানো, আমলাদের দিয়ে আগের মতো জনতার মঞ্চের স্বপ্ন দেখা, তাবলীগের মতো নির্দলীয় ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে বিভেদ তৈরি, সবশেষে রাষ্ট্রের হৃদপি- সচিবালয়ে আগুন লাগানোÑ কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এসব যে আওয়ামী লীগ করবে, তা দেশবাসীর অজানা ছিল না। আর সেকারণেই ছাত্র-জনতা সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্র, অপকৌশল নস্যাৎ করে যাচ্ছে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়।
৫ আগস্টের মতো কোনো একটা দিন যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, তা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই জানতেন। নিজেদের অপকর্ম এবং তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয়ে ফিরে আসতে পারে সে কথা দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই প্রকাশ্যে উচ্চারণও করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পালিয়ে গিয়ে হাছান মাহমুদ ও শামীম ওসমানের মতো কোনো কোনো নেতা আকারে-ইঙ্গিতে নিজেদের ভুল-ত্রুটি-অপরাধের কথা স্বীকারও করেছেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার না হলেও অস্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের উন্মত্ততা। দেশটি সর্বোতভাবে প্রমাণ করছে যে, তার সেবাদাস সরকারের এভাবে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়াকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের নতুন নতুন উচ্চতার বুলি আউড়ানো দেশটি মেনে নিতে পারছে না বাস্তবতাকে। তাই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের চেয়ে তারাই যেন বেশি কাতর হয়ে পড়েছে। মরিয়া হয়ে উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে, বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নির্লজ্জভাবে লাগামহীন মিথ্যা অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে দেশটি। শুরুতেই সর্বদলীয় বৈঠক করে এ ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাপারে। তাদের আসকারা পেয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মতো চ্যালা-চামু-ারা পাগলের প্রলাপের মতো যা খুশি বলে যাচ্ছে, হুঙ্কার দিচ্ছে বাংলাদেশ দখল করে নেবে বলে! মোদির অনুগত মিডিয়ার সংঘবদ্ধ মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদে বিভ্রান্ত হয়ে উগ্রপন্থীরা কলকাতা, ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মিছিল-মিটিং করেছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করে কলকাতায় বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে, ত্রিপুরায় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। কোনো কোনো হোটেল মালিক মধ্যরাতে বাংলাদেশিদের রাস্তায় বের করে দিয়েছে, কোনো কোনো হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে কোনো পণ্য রপ্তানি করবে না, সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধিসহ নানা রকমের হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন দেশের ভেতরে এবং বাইরে তাদের এসব পদক্ষেপ এখন বুমেরাং হয়ে তাদের কাছেই ফিরতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ফ্যাক্ট চেকাররা ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা ও অপপ্রচারকে লাগাতারভাবে উন্মোচন করে তাদের মুখোশ খুলে দিচ্ছে। বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তাদের এসব নোংরামির খবর ফলাও করে প্রচার পাচ্ছে। অন্যদিকে তাদের পর্যটন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বড় উৎস ছিল বাংলাদেশ। বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে মেডিক্যাল ব্যবসার বড় আয়ও হতো বাংলাদেশিদের কাছ থেকে। ব্যবসা, পর্যটন এবং চিকিৎসার জন্য যাওয়া বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির থাকা-খাওয়া, কেনা-কাটাকে ঘিরে প্রচুর হোটেল, মার্কেট গড়ে উঠেছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে। তাদের বাংলাদেশবিরোধী অপরিণামদর্শী অপপ্রচার ও উসাকানির কারণে এখন প্রায় সবই বন্ধ। হোটেল আছে, থাকার লোক নেই। মার্কেট আছে, ক্রেতা নেই। হাসপাতাল আছে, রোগী নেই। পর্যটন স্পটেও নেই রমরমা অবস্থা। ওদিকে বাংলাদেশিরা আমদানি করছে না বলে ভারতীয় কৃষকরা তাদের পিঁয়াজ, আলু বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশবিরোধী উগ্র রাজনীতিবিদ ও মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। চিকিৎসকদের সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে সকল ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশিদের আহ্বান জানাচ্ছে। চিহ্নিত মিডিয়াগুলোকে সেদেশের সচেতন মানুষজনই ‘দালাল’ ‘দালাল’ বলে গালাগালি করছে। অন্যদিকে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েও তারা বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হচ্ছে, যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে ক্রমেই তলানির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সাথে আঁতাত করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় বসিয়েছিল ভারত, যা প্রণব মুখার্জী তার আত্মজীবনীতে স্বীকার করে গেছেন। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার পর পরই পিলখানায় তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের মেরুদ-কে ভেঙ্গে দেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয়। একই সঙ্গে দেশের ডানপন্থী ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তিকে নিঃশেষ করতে বিচারের নাটক সাজিয়ে একের পর এক শীর্ষ নেতৃত্বকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। শাপলাচত্বরে নিরস্ত্র আলেম-ওলামাদের সমাবেশে রাতের আঁধারে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়। ধারাবাহিকভাবে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, বিরোধী মত-পথের হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন করা হয়। মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হয়রানি করা হয়। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু ক্ষমতায় রাখার রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। সেই সুযোগ নিয়ে পর পর তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে একচ্ছত্র করা হয়।
এই সকল কিছুর পেছনেই ভারতের ইন্ধন কিংবা হস্তক্ষেপ ছিল ওপেন সিক্রেট। আর তারা আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার জন্য এত কিছু করেছে শুধু একপাক্ষিকভাবে নিজেদের সার্বিক চাহিদা পূরণের স্বার্থে। শেখ হাসিনাও ভারতের প্রতি তার আনুগত্যের প্রমাণ রেখেছেন পদে পদে, বিনাবাক্যে তাদের প্রতিটি দাবি-আবদার মিটিয়েছেন। বন্দর দিয়েছেন, করিডোর দিয়েছেন, ফেনী চিকেন নেকের মতো স্পর্শকাতর স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের নামে ঘাঁটি করার জন্য বিপুল জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। চাওয়া মাত্রই ফেনী নদীর পানি দিয়েছেন, কিন্তু তার বদলে তিস্তা পানিচুক্তির ব্যাপারে টু শব্দটিও করেননি। বঙ্গপোসাগরে ভারতের সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের উপকূলে তাদের রাডার স্থাপনের অনুমোতি দিয়েছেন। চীন বাংলাদেশের বৃহত উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার পরও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ তাদের করতে দেননি ভারতের আপত্তির কারণেই। দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ভারতীয়দের দিয়ে দেয়া, ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগ দেয়া, এমনকি দেশের ভেতরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার অবারিত সুযোগ করে দেয়া থেকে শুরু করে হেন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ভারতীয় স্বার্থকে রক্ষা করেননি শেখ হাসিনা। একতরফাভাবে ভারতকে তিনি এতটাই দিয়েছেন যে, শেষ পর্যন্ত নিজেও স্বীকার না করে পারেননি। নির্লজ্জের মতো মিডিয়াতেই বলেছেন, ‘ভারতকে যা যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
বিনাবাক্যে বাংলাদেশের সর্বস্ব বিকিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষা করার প্রতিদান হিসেবেই ভারত অন্তিম সময়ে তার সেবাদাসী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশে। এতে একদিকে বিশ্বজুড়ে তার ইমেজ সঙ্কট বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে তাদের এতদিনের সাজানো স্বার্থের জাল একনিমিষেই তছনছ হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জেগে ওঠা নতুন বাংলাদেশ তার সাথে কথা বলছে চোখে চোখ রেখে। ভারতের আধিপত্যবাদের পতন যে শুধু বাংলাদেশেই হয়েছে, তা কিন্তু নয়। সাতটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই এখন তার বৈরী সম্পর্ক। ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানের সাথে বৈরী ভাব। চীনের সঙ্গে কয়েকদিন পর পরই দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে আছে। দাদাগিরি ফলাতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানও গেছে। বাংলাদেশের জনগণও অতিষ্ঠ। দেশটি বন্ধুবেশে তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে এতটাই নগ্ন হস্থক্ষেপ করেছে যে, কেউ তার পক্ষে নেই।
ভারত যে শুধু তার এশিয় প্রতিবেশীদের সাথেই বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তা নয়। কানাডিয়ান নাগরিক শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে গুপ্ত ঘাতক দিয়ে হত্যা করার তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির সাথে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর জেরে উভয় দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে। আমেরিকাতেও আরেক শিখ নেতাকে গুপ্ত ঘাতক দিয়ে হত্যা করতে গিয়ে সে দেশের গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে যায় ভারতীয়দের নীল নকশা। এসব নিয়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা এখনো চলমান। এর মধ্যেই সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির ক্যাশিয়ার খ্যাত আদানি গ্রুপের মালিক গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে দুর্নীতির মামলার খবর আসে। ফলে আদানি গ্রুপের শেয়ার ভ্যালু বড় ধরনের ধাক্কা খায়। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জটিল হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে, ভারত শুধু তার প্রতিবেশীদের সঙ্গেই বৈরী সম্পর্ক তৈরি করেনি, দূরদেশগুলোতেও ক্রমেই বন্ধুশূন্য হয়ে পড়ছে।
নিজ দেশের নাগরিকদের মধ্যেও নানা রকম বিভেদ-বিভাজন তৈরি করে ভেতর থেকেও ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশটি। বিশেষ করে, ১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর গুম-খুন, অত্যাচার-নিপীড়ন, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ রক্ষাকবজ বিলুপ্ত করে সম্প্রতি তার দমন-পীড়ন আরো বাড়িয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরুর গোশত থাকার সন্দেহে মুসলমানদের পিটিয়ে মারার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কোনো কোনো রাজ্যে মুসলমানদের প্রকাশ্যে ইবাদত-বন্দেগি নিষিদ্ধ করেছে। দিল্লিতে জুমার নামাজ আদায়রত মুসলমানদের লাথি মেরে, পিটিয়ে নির্যাতন করেছে পুলিশ। বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির নির্মাণ করে বিশ্বমুসলিমদের হৃদয়ে আঘাত করেছে ভারত। এর পর থেকে ভারতের ঐতিহাসিক বিভিন্ন মসজিদ, দরবার, মুসলিম স্থাপনার নিচে মন্দির আছে বলে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপমহাদেশের সুফি স¤্রাট খ্যাত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) এর দরবার আজমীর শরীফের নিচেও মন্দির থাকার দাবি তুলেছে উগ্র হিন্দুরা। আসামে এনআরসির নামে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। দেশটিতে বসবাসরত খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির মানুষ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ‘ঘর ওয়াপসি’র নামে জোর করে তাদের হিন্দু বানানো হচ্ছে। এমনকি নি¤œ বর্ণের হিন্দুরা পর্যন্ত উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বাইরে বন্ধুহীন এবং ভেতরে নাগরিকদের মধ্যে নানা বিভাজন তৈরির মাধ্যমে ভারত তার আধিপত্যবাদের পতনকেই ত্বরান্বিত করছে। তার আলামতও দৃশ্যমান হচ্ছে নানা দিক থেকে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post