ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে পাখির আঘাত (বার্ড হিট) ক্রমেই উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিমানবন্দরের আশপাশে জলাশয়, উচ্ছিষ্ট খাবার এবং রানওয়ের সবুজ ঘাস পাখিদের আকৃষ্ট করছে, যা উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে। বিশেষত শীত মৌসুমে এই ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
পাখির আঘাতের পরিসংখ্যান ও প্রভাব
গত চার বছরে দেশি-বিদেশি অন্তত সাতটি উড়োজাহাজ বার্ড হিটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার, ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ, এবং আমিরাত এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ রয়েছে। সর্বশেষ, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বার্ড হিটের কারণে একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যা সারাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।
বার্ড হিটের ঘটনা শুধু উড়োজাহাজের ক্ষতির কারণ নয়, এটি যাত্রী ও পাইলটদের জন্য মানসিক চাপেরও কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখির আঘাতে ইঞ্জিনের ফ্যান ও ব্লেড ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে।
পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ে ঘাটতি
এয়ারলাইনসগুলো অভিযোগ করছে, পাখি তাড়ানোর দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদের কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। পাইলটরাও এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেক পাইলট জানান, বার্ড হিটের ঝুঁকির কারণে তাদের উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়।
যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বার্ড হিট রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
অ্যাক্টিভ বার্ড কন্ট্রোল: সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবাহিনীর বার্ডশ্যুটাররা নিয়মিত পাখি তাড়ানোর কাজ করছেন।
পরোক্ষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা: ক্যামেরা, সাউন্ড রিপেলিং, লেজার গান এবং ইরিটেটেড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ: পাখির উৎস চিহ্নিত করতে এক বছর মেয়াদি জরিপ চলছে। আশপাশের জলাশয়, ডাস্টবিন,
রেস্টুরেন্ট ও উচ্ছিষ্ট খাবারের উৎসগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বার্ড হিটের ঝুঁকি শুধু বাংলাদেশের বিমানবন্দরের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি একটি বিমান পাখির আঘাতের কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে, যেখানে ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিমানবন্দর এলাকায় পাখি তাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিমানবন্দরটি শহরের মাঝখানে হওয়ায় পাখির উৎস স্থানান্তর একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাখি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বার্ড হিট প্রতিরোধে মনিটরিং কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি পাখিদের আকৃষ্টকারী উৎসগুলো দূরীকরণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাত্রী ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান অপরিহার্য।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post