লোকমুখে শোনা যায় জ্বীন নিয়ে নানা ঘটনা। কখনো শোনা যায় জ্বীনে মানুষ তুলে নিয়ে গেছে,কাউকে জ্বীনে ধরেছে আবার জ্বীনে গাছের ডাল ভেঙ্গে চলে গেছে এমন অনেক ধরনের ঘটনার গল্প শোনা যায় লোকমুখে। তবে এবার ভিন্ন ধর্মী এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওদা মটমুড়া গ্রামে। এক গর্ভধারিণী মায়ের বাচ্চা প্রসব করিয়ে বাচ্চা নিয়ে গেছে জ্বীন, এমনই অভিযোগ করেছে আজমিরা খাতুন নামের ওই নারী।
তার দাবি, সিজারিয়ানের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে পাঁচজন জ্বীন তার রুমে এসে বাচ্চা প্রসব করে নবজাতককে নিয়ে চলে যায়। এসময় বাচ্চার সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের রিপোর্টগুলিও নিয়ে যায় জ্বীনে।
ঘরের দেওয়ালে দুই হাতের রক্তমাখা ছাপ, হাত ও পায়ে জ্বীনের নখের আঁচড়ানো দাগ রয়েছে আজমিরা খাতুনের শরীরে। নবজাতক বাচ্চা হারিয়ে দিশেহারা তিনি।
ওই নারী বলেন, ঘরের মধ্যে দুটি সাপ মারা তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি যখন অন্তসত্ত্বা ছিলেন, তখন তার ভাই ২টি সাপ পিটিয়ে মারে। এর কিছুদিন পর একটি জ্বীন এসে আমার গলা চেপে ধরে এবং বলে তুই আমার বাচ্চা মেরেছিস আমি তোর বাচ্চা নিয়ে যাব।
স্থানীয়রা জানান, আজমিরা খাতুন গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের নওদা মটমুড়া গ্রামের উত্তর পাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে এবং উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া মোল্লা পাড়া গ্রামে ছহির উদ্দিনের ছেলে সৌদি প্রবাসী মোকাদ্দেসের স্ত্রী। আমার ঘটনা শুনে দেখতে এসেছি। তবে কিভাবে কি হয়েছে তা আমরা বিস্তারিত জানিনা। শুধু শুনেছি জ্বীনেরা সন্তান ও কাগজপত্র সব নিয়ে গেছে।
আজমিরা খাতুন জানান, গতকাল রোববার সকাল ১১ দিকে সিজারিয়ানে জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় জ্বীনেরা প্রবেশ করে আমার ঘরে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে বাচ্চা প্রসব করায় পাঁচজন। আমি তাদের সাথে জোর করতে গেলে তারা আমার উপরে শারীরিক নির্যাতন চালায়। আমি চিৎকার করলেও বাহিরের কেউ শুনতে পায় না। আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাচ্চা প্রসব করানোর পর বাচ্চা ও হাসপাতালে রিপোর্টগুলি নিয়ে যায় জ্বীনেরা। দীর্ঘক্ষণ ঘরে থাকায় আমার মা ঘরের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার
আজমিরা খাতুনের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার মেয়ে ও ছেলে দুজন মিলে গর্ভবতী অবস্থায় দুটি সাপ মেরেছিল সে কারণেই জ্বীনেরা নবজাতককে নিয়ে গেছে।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাজহারুল ইসলাম জানান, আজমিরা খাতুন গর্ভবতী অবস্থায় দুটি সাপ মেরেছিল সে কারণেই জ্বীনেরা ছেলেকে নিয়ে গেছে এমন ঘটনা শুনতে পেয়ে আমরা সেখানে যাই। ইউএনও ও ডাক্তার এসেছিল, পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিষয়টি জানা যাবে। তাছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাসুদুর রহমান জানান, আমরা ঘটনা শুনতে পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযাযী পরীক্ষা করে দেখলাম, তিনি গর্ভবতী ছিলেন না। তারপরও আমরা ঘটনার সত্যতা জানার জন্য রোগীকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাব।
তিনি আরও জানান, আমরা রোগীর বাবার পরিবার ও শ্বশুরের পরিবারের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জ্বীন নিয়ে যেসব কথা ছড়ানো হচ্ছে, বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন সত্যতা নেই।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা জানান, আমরা ঘটনা শুনেই দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেছি। তাদের পরিবারের সাথেও কথা বলেছি। তবে জ্বীনের সন্ধান প্রসব করিয়ে সন্তান নিয়ে গেছে এমন কোন তথ্য বা সত্যতা পাইনি। তাছাড়া সে গর্ভবতী ছিল এমন কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি। তারপরও আমাদের মেডিকেল অফিসার এসেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই মূল ঘটনা জানা যাবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post