রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে মিয়ানমার এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোই হবে টেকসই সমাধান। তা না হলে প্রতিবেশী সব দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
তিনি শনিবার (তারিখ উল্লেখ করুন) ঢাকার খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত “ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন” শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ মন্তব্য করেন।
তৌহিদ হোসেন জানান, থাইল্যান্ডে মিয়ানমার ইস্যুতে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মূলত সীমান্ত অপরাধ, মাদক এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা সরাসরি আলোচনায় না থাকলেও তিনি বলেছেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু এই তিনটি সমস্যার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এ সমস্যার সমাধান না হলে কোনো ক্ষেত্রেই স্থায়ী সমাধান আসবে না।”
তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারের দুই লাখ রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণী ভবিষ্যতে আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে, যার লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। এই সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী সব দেশের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
দেশের জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের উচিত আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। দ্বিমতের জায়গা থাকতে পারে, কিন্তু তা যেন জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি না করে।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “গত ৫২ বছরে আমাদের দেশে এমন কোনো ঐক্য দেখা যায়নি। বরং বিরোধী দল অনেক সময় সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেছে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারত ও চীনের মধ্যে শত্রুতা রয়েছে, তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমাদেরও স্বার্থের ভিত্তিতে একটি ব্যালেন্স রেখে চলতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বড় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় নই, তাই কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।”
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, “দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ব্যক্তিগত ও দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রের স্বার্থকে গুরুত্ব দিলে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, “ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আমাদের জানার মধ্যেই। এতে কোনো গোপনীয়তা ছিল না।”
তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা, জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্যের বিষয়টি নিয়ে তার সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post