আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনী প্রতিবেশী পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ‘বেশ কয়েকটি পয়েন্ট’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আফগান মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও বলা হয়েছে, হামলাগুলো “অনুমানমূলক রেখার বাইরে” চালানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ডুরান্ড লাইন নামে পরিচিত এই রেখাকে আফগানিস্তান কখনোই সীমানা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। আফগান মন্ত্রণালয় এটিকে “কাল্পনিক লাইন” আখ্যা দিয়ে বলেছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা করা হয়েছে।
ডুরান্ড লাইন হলো ঔপনিবেশিক আমলে চিহ্নিত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি সীমানা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও আফগানিস্তান এটি মেনে নেয়নি। সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত পশতুন জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে রেখেছে এই লাইন, যা আফগানিস্তানে আবেগপূর্ণ একটি ইস্যু।
পাকিস্তান ইতোমধ্যে ডুরান্ড লাইন বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে। কিন্তু আফগানিস্তান এই সীমানাকে নিজের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে। আফগান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ওই অঞ্চলকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড হিসেবে মনে করি না। ফলে অঞ্চলটি সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।”
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের সীমান্তে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে শুক্রবার রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত একজন পাকিস্তানি আধাসামরিক সেনা নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন। রাতে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে সীমান্তে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কিন্তু আমাদের নিরীহ মানুষদের হত্যা করা থেকে টিটিপিকে (পাকিস্তান তালেবান) থামাতে হবে। এটা আমাদের জন্য একটি রেড লাইন।”
আফগানিস্তানের হামলা এমন সময়ে ঘটলো, যখন তারা পাকিস্তানকে সীমান্তের কাছে বিমান হামলায় ৪৬ জনকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে। যদিও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সংঘর্ষ দুই দেশের সম্পর্কের উত্তেজনা আরও বাড়াবে। নিরাপত্তা ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে এমন সংঘর্ষ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post