কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ‘গডফাদার’ হিসাবে পরিচিত ব্রিটিশ-কানাডিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিন্টন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই প্রযুক্তি আগামী ৩০ বছরে মানুষকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এআই অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে ওঠায় এই প্রযুক্তির বিপরীতে মানুষকে তিন বছরের শিশু হিসাবেও তুলনা করেছেন তিনি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রফেসর হিন্টন। গত ৮ অক্টোবর রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জানায়, কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কসহ মেশিন লার্নিংয়ের মৌলিক আবিষ্কারের জন্য জিওফ্রে হিন্টন ও জন হোপফিল্ডকে এ বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীর ধারণা, আগামী তিন দশকের মধ্যে মানুষের বিলুপ্তি ঘটানোর ১০ থেকে ২০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে এআইয়ের। যদিও এর আগে গত বছর এই সম্ভাবনার হার ১০ শতাংশ কম জানিয়েছিলেন তিনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উত্থানের কারণে সেই হার এবার বাড়িয়ে বলেছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির রেডিও ফোরের এক অনুষ্ঠানে পূর্বের পূর্বাভাসের বিষয়ে তার চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে কি না, জানতে চাইলে হিন্টন বলেন, তেমন নয়, তবে এটি ১০ থেকে ২০ শতাংশ। কৃত্রিম বুুদ্ধিমত্তায় প্রতিকূলতা বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যদি কিছু ঘটে। আপনি দেখেন, আমাদের আগে কখনও মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বিষয়কে মোকাবিলা করতে হয়নি।
তিনি বলেছেন, ‘‘আর আপনি কম বুদ্ধিমান বিষয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত অধিক বুদ্ধিমান বিষয়ের কত উদাহরণ জানেন? খুব কম উদাহরণ আছে। একজন মা আর অন্যজন শিশু। বিবর্তন মাকে নিয়ন্ত্রণে শিশুকে অনুমতি দেওয়ার জন্য অনেক কাজ করেছে। এটিই একমাত্র উদাহরণ যা আমি জানি।’’
কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি উন্নত এআই সিস্টেমের সঙ্গে তুলনা করার সময় মানুষকে শিশু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি এটিকে এভাবে ভাবতে পছন্দ করি, নিজেকে এবং একটি তিন বছর বয়সী শিশুকে কল্পনা করুন। আমরা তিন বছর বয়সী হব।’’
এর আগে, ২০২৩ সালে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গড়ে তোলার ঝুঁকি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন হিন্টন। এআইয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে গুগলের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে কথার বলার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে পদত্যাগ করতে হয় তাকে। সেই সময় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, অসৎ উদ্দেশ্য যাদের আছে, তারা ক্ষয়ক্ষতির জন্য এআইয়ের ব্যবহার করতে পারেন।
এআই দ্রুত অগ্রগতির বিকাশের বিষয়ে হিন্টন বলেন, ‘‘আমি ভাবিনি, আমরা এখন যেখানে আছি, (এটি) হবে। আমি ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে কোনও এক সময়ে আমরা এখানে পৌঁছাব।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, আগামী ২০ বছরে মানুষের চেয়ে অত্যধিক স্মার্ট হয়ে উঠতে পারে এআই সিস্টেমগুলো। এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর চিন্তার বিষয়। প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত বিকাশ ঘটায় এআইকে নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post